এপিসি ডেস্ক:
বৃহস্পতিবার গভীর রাতে আলীকদম-থানচি সড়কের ২৬ কিলোমিটার এলাকায় আলীকদম জোনের আওতাধীন তল্লাশি চৌকিতে হামলার ঘটনাটি ‘ভুল বুঝাবুঝি’ বলে জানা গেছে। এর আগে হামলাটি কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) সন্ত্রাসীদের দ্বারা হয়েছিল বলে জানা গেলেও শুক্রবার বিকালে উল্টো তথ্য পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় ২ জন শ্রমিক গুলিবিদ্ধ হয়েছে। এরমধ্যে মোঃ তারেক (২৬) নামের একজনের অবস্থার গুরুতর।
আহত শ্রমিক আরাফাত (১৮) শুক্রবার (৫ এপ্রিল) রাত সাড়ে আটটায় মুঠোফোনে জানায়, তারা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আলীকদম থেকে একটি ইটভর্তি ট্রাক নিয়ে থানচির বাকলাই সড়কের নির্মাণ কাজের স্থলে যাচ্ছিলেন। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে থানচি বাজার এলাকায় গুলিগুলি ঘটনা ঘটলে তারা রাস্তার পাশে ইট আনলোড করে আলীকদমের উদ্দেশ্যে ফিরছিল। আসার পথে বৃহস্পতিবার মাঝ রাতে তাদের ট্রাকটি আলীকদম-থানচি সড়কের ২৬ কিলোমিটার নিরাপত্তা চৌকি এলাকায় পৌঁছুলে তাদের ওপর গুলি ছুঁড়া হয়। এতে তারা হতভম্ব হয়ে গাড়ি নিয়ে দ্রুত পলায়নকালে গাড়ীতে থাকা শ্রমিক তারেক ও আরাফাত গুলিবিদ্ধ হন। আহত দুজন শ্রমিক বর্তমানে প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে চিকিৎসাধীন আছে।
তিনি আরও বলেন, তাদের গাড়িটি নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা কেএনএফ সন্ত্রাসীবাহী গাড়ি মনে করে ভুলক্রমে গুলি ছুঁড়ে। এতে তারেক ও আরাফাত আহত হয়। তাদের ওই গাড়িটি বর্তমানে আলীকদম-থানচি সড়কের ২৬ কিলোমিটার এলাকার কালামিয়া পাড়া এলাকায় রাস্তার পাশে রয়েছে।
শুক্রবার সন্ধ্যায় এ প্রতিবেদকের হাতে আসা এ সংক্রান্ত একটি ভিডিওতে গাড়িটির চালকের সিটে এবং দরজায় রক্তের দাগ এবং গাড়ীর সামনের গ্লাসে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় দেখা যায়।
উল্লেখ্য, ৩৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের আলীকদম-থানচি সড়কটির ২৬ কিলোমিটার এলাকাটি থানচি ও আলীকদম উপজেলার সীমান্তবর্তী। সেখানে আলীকদম সেনা জোনের নিয়ন্ত্রণে একটি ক্যাম্প রয়েছে। রাস্তার পাশেই রয়েছে সেনা ও পুলিশের যৌথ তল্লাশী চৌকি।
বৃহস্পতিবার রাতে থানচির ঘটনার পর গভীর রাতে আলীকদমে কেএনএফ এর হামলার বিষয়টি বিভিন্নভাবে ছড়িয়ে পড়লেও শুক্রবার দিনভর এনিয়ে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বৃহস্পতিবার রাতের ঘটনাটি নিছক ‘ভুল বুঝাবুঝি’।
তবে আলীকদম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) খন্দকার তবিদুর রহমানে বরাতে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম জানায়, রাত পৌনে ১টার দিকে ২৬ কিলোমিটার এলাকার এ যৌথ তল্লাশি চৌকিতে হামলা চালায় কেএনএফ সন্ত্রাসীরা।
তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাসীরা গাড়িতে করে এসে তল্লাশি চৌকি ভেঙে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। বাধা দিলে তারা গুলি চালায়। এ সময় তল্লাশি চৌকিতে থাকা পুলিশ সদস্যরা পাল্টা গুলি বর্ষণ করেন। পরে হামলাকারীরা পিছু হটে।’
থানচিতে রাতে গোলাগুলিঃ
আলীকদম-থানচি সড়কের ২৬ কিলোমিটার যৌথ তল্লাশী চৌকিতে হামলার আগে থানচি বাজার ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এলাকায় পুলিশ ও বিজিবির সঙ্গে সন্ত্রাসীদের ব্যাপক গোলাগুলি হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৮টায় থানচি বাজার ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এলাকায় প্রায় এক ঘণ্টার বেশি এ গোলাগুলি চলে।
স্থানীয় সাংবাদিক অনুপম মার্মা ও শহিদুল ইসলাম জানান, আমরা ভালো নেই। স্থানীয়রা চরম আতঙ্কে অনেকটা গৃহবন্দির মতো অবস্থায় রয়েছেন। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সাড়ে ৮টা থেকে থানচি বাজার ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এলাকায় গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। তবে হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
প্রশাসনের বক্তব্যঃ
বান্দরবানের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রায়হান কাজেমী বলেন, ‘পাহাড়ের সন্ত্রাসী সংগঠন কেএনএফ দ্বিতীয় দফায় সোনালী ব্যাংকের থানচি শাখায় হানা দিতে চাইলে পুলিশ প্রতিহত করে। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি হয়।’
তিনি আরও জানান, যেকোনও সময় আবারও গোলাগুলির ঘটনা ঘটতে পারে।
থানচি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ মামুন বলেন, ‘রাত সাড়ে ৮টা থেকে থানচি বাজার ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এলাকায় কেএনএফের সঙ্গে পুলিশ ও বিজিবির গোলাগুলি শুরু হয়। মূলত দুই স্থানে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। থানচি থানা ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পেছনে। পুলিশ এবং বিজিবি দুই পক্ষের সঙ্গেই গোলাগুলি হয়েছে। তবে এতে কারও হতাহতের খবর এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।’
থানচি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জসীম উদ্দীন বলেন, ‘রাত সাড়ে ৮টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত গোলাগুলি হয়েছে। এখন পরিস্থিতি শান্ত আছে। আমরা জানতে পেরেছি, সন্ত্রাসীরা থানার আশপাশে রয়েছে। এজন্য আমরা সতর্ক অবস্থায় আছি।’
গোলাগুলির বিষয়ে থানচি উপজেলা চেয়ারম্যান থোয়াই হ্লা মং মারমা সাংবাদিকদের বলেন, গোলাগুলির শব্দে ভয়ে ছিলাম। এমন পরিস্থিতি আগে কখনো হয়নি।
সোনালী ব্যাংক ম্যানেজার উদ্ধারঃ
বুধবার (৩ এপ্রিল) থানচি থানার সামনে সোনালী ও কৃষি ব্যাংকের দুটি শাখা থেকে ১৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা লুট করে কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)। তাদের প্রতিরোধ করতে আসার পথে থানচি থানা পুলিশের সদস্যদের লক্ষ্য করে দুবার গুলি ছোড়ে অস্ত্রধারীরা।
এর আগে, মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) রুমা উপজেলা কম্পাউন্ডের মসজিদে তারাবির নামাজ আদায় করছিলেন সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজার নিজাম উদ্দিন। এ সময় সন্ত্রাসীরা মসজিদে ঢুকে তাকে ধরে নিয়ে গিয়ে সোনালী ব্যাংক শাখায় হামলা চালায়।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে ব্যাংক ম্যানেজার নিজামকে উদ্ধার করে র্যাব। এদিন সন্ধ্যায় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) সদর দফতরের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির আলোচনা বন্ধের সিদ্ধান্তঃ
কেএনএফ সদস্যদের একের পর এক লুটপাট ও অপহরণের ঘটনায় গতকাল বুধবার এক জরুরি সভা ডেকেছিল শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি। সভায় নেওয়া সিদ্ধান্ত তুলে ধরার জন্য বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করা হয়।
তবে থানচিতে দুটি ব্যাংক থেকে টাকা লুট ও ব্যাংক কর্মকর্তাকে অপহরণের ঘটনায় সশস্ত্র গোষ্ঠী কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সঙ্গে সব ধরনের আলোচনা বন্ধ ঘোষণা করেছে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি।
আলীকদমে পুলিশ সতর্কাবস্থায়ঃ
রুমা এবং থানচির ঘটনার পর থেকে আলীকদম থানার পুলিশ সতর্কাবস্থায় রয়েছে। পুলিশ রাতদিন সোনালী ব্যাংক এবং কৃষি ব্যাংকের মধ্যবর্তী স্থান আলীকদম প্রেসক্লাব চত্ত্বরে পাহারায় রত রয়েছেন।
আপনার মতামত লিখুন :