আলীকদম কলেজের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস


Momtaj Uddin Ahamad প্রকাশের সময় : অগাস্ট ৪, ২০২৪, ৭:০০ পূর্বাহ্ন /
আলীকদম কলেজের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

।। মমতাজ উদ্দিন আহমদ ।।

সবুজাভ অরণ্যঘেরা পাহাড়ি জেলা বান্দরবানের আলীকদমে প্রায় ৭০ হাজার জনগোষ্ঠীর বসবাস। অন্তর্বিহীন মৌননিস্তব্ধ সৌন্দর্যের দিগন্তবিস্তৃত গ্রন্থিল পাহাড়িকার এ জনপদ একটি পর্যটন সম্ভাবনাময় উপজেলা। চারদিকে ঘেরা অজস্র বিটপী কান্তারে শৈলসারি, দাঁড়িয়ে রয়েছে যেন অতন্দ্র প্রহরী; তারই মাঝে শৈবলীনি মাতামুহুরীর আছলে ঢাকা গিরিনন্দিনী আলীকদম যেন একটি স্বপ্নপুরী!

প্রকৃতির সবুজাভ মায়াবী চাদরে ঢাকা এ স্বপ্নপুরীতে একটি অভাব পরিলক্ষিত ছিল স্বাধীনতা পরবর্তীকাল থেকেই। সেটি হচ্ছে উচ্চ শিক্ষাক্ষেত্রে স্বতন্ত্র কোনো কলেজ ছিলো না।

বান্দরবান পার্বত্য জেলার ৭টি উপজেলার মধ্যে আলীকদম উপজেলাটি দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় অনগ্রসর ও পিছিয়ে পড়া একটি পার্বত্য জনপদও বটে। উপজেলা ভিত্তিতে দেশের সবচেয়ে গরিব তিনটি উপজেলার মধ্যে ‘আলীকদম উপজেলা’ একটি।

২০২১ খ্রিস্টাব্দে পরিচালিত সরকারের এক সমীক্ষায় এমন তথ্য উঠে এসেছে। পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) ও যুক্তরাজ্যের বাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে দিয়ে সমীক্ষাটি করিয়েছে।

বিআইডিএস এর এ সমীক্ষায় ‘অনগ্রসর, পিছিয়ে পড়া ও গরীব উপজেলা’র তথ‌্যটি উঠে আসলেও আলীকদমের শিক্ষাদারিদ্র কোন অংশেই কম নয়।

১৯৮২ খ্রিস্টাব্দে প্রশাসন বিকেন্দ্রিকরণের আওতায় সৃষ্ট হওয়া এ উপজেলা শিক্ষাক্ষেত্রে এখনো বেশ অনগ্রসর। উপজেলা সৃষ্টির ৪১ বছর পর অবশেষে ২০২৩ খ্রিস্টাব্দে আলীকদমবাসীর জন্য সার্বজনীন কলেজ হিসেবে “আলীকদম কলেজ” স্থাপন হয়েছে।

আলীকদম কলেজ প্রতিষ্ঠার উদ‌্যোগ নেওয়ার ক্ষেত্রে বান্দরবানের সাবেক সংসদ সদস‌্য জনাব বীর বাহাদুর  উশৈসিং এর নির্দেশনা প্রেরণা যুগিয়েছে। গত ২০২৩ খ্রিস্টাব্দের মে মাসে আলীকদমের একটি জনসভায় তিনি আলীকদম কলেজ প্রতিষ্ঠার জন‌্য নির্দেশনা দেন স্থানীয় প্রশাসন ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দকে। এরপর উপজেলা প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, মিডিয়াকর্মী এবং শিক্ষানুরাগী জনসাধারণ কলেজ প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসেন।

১০ জুলাই ২০২৩ তারিখে গঠিত হয় কলেজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ‌্যে ১৯ সদস‌্যের একটি কমিটি। এরপর শুরু হয় কলেজ প্রতিষ্ঠার কর্মযজ্ঞ। কলেজের স্থান নির্বাচন ও জমি দানগ্রহণ উপকমিটির সদস‌্যরা স্থানীয় কতিপয় জমির মালিকদের জমি দান প্রদানের জন‌্য অনুপ্রাণিত করতে থাকেন।

ফলে একে একে ৮টি দাতাপক্ষের দানের মাধ‌্যমে আলীকদম কলেজ প্রতিষ্ঠার জন‌্য এ পর্যন্ত ৮.৫৪ একর ১ম, ২য় ও ৩য় শ্রেণির জমি দানপত্র পাওয়া যায়। প্রাথমিক পর্যায়ে আলীকদম কলেজের কাজ এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে সাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাবের মোঃ সোয়াইবের অবদান অনস্বীকার্য।

পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের স্মারক নং- ২৯.২০১.০৩৩.০০.০০.০২.২০২৩-২২৫ তারিখ: ৩১ নভে-২০২৩ খ্রিঃ মূলে আলীকদম কলেজ প্রতিষ্ঠার জন্য শিক্ষামন্ত্রী বরাবর উপানুষ্ঠানিক পত্র প্রেরণ করেন তৎকালীন পার্বত্যমন্ত্রী।

গত ২ জুন ২০২৪ তারিখে আলীকদম উপজেলা পরিষদের মাসিক সমন্বয় কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বান্দরবানের সাবেক সাংসদ বীর বাহাদুর (উশৈসিং)। এতে প্রেসক্লাব সভাপতি কলেজ প্রতিষ্ঠার জন‌্য পর্যাপ্ত জমির দানপত্র পাওয়ার তথ‌্য তুলে ধরেন এমপির কাছে। এরপর প্রধান অতিথি আলীকদম কলেজ এর একাডেমিক ভবনসমূহ নির্মাণের জন‌্য ৫ কোটি টাকার প্রকল্প ঘোষণা দেন। তাঁর এ ঘোষণা আলীকদম কলেজ প্রতিষ্ঠার পথকে ত্বরান্বিত করেছে।

গত ০৮ জুলাই ২০২৪ তারিখে মাধ‌্যমিক ও উচ্চ মাধ‌্যমিক শিক্ষা বোর্ড, চট্টগ্রামের চেয়ারম‌্যান ও কলেজ পরিদর্শকের কাছে আলীকদম কলেজ স্থাপন সংক্রান্ত প্রশাসনিক আবেদনপত্র হস্তান্তর করেন উদ‌্যোক্তরা।

উল্লেখ‌্য, চারটি ইউনিয়নের সমন্বয়ে গঠিত এ উপজেলার যোগযোগ ব্যবস্থার প্রতিকূলতা ও দুর্গমতার কারণে এবং উপজেলা পর্যায়ে সার্বজনীন কলেজ প্রতিষ্ঠা না হওয়ায় সামর্থ্যের অভাবে দরিদ্র পরিবারের সন্তানেরা এলাকার বাইরে গিয়ে কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেতো না।

এখন আশার দুয়ার খুলেছে। অবশেষে আলীকদম কলেজ প্রতিষ্ঠা হয়েছে।

আলীকদম কলেজ প্রতিষ্ঠা কমিটির অক্লান্ত পরিশ্রমে জমি দানগ্রহণ, তহবিল সংগ্রহ, জমির ডিজিটাল সার্ভে এবং কলেজ ক্যাম্পাসের জন্য মাস্টার প্ল্যান তৈরী সম্পন্ন হয়েছে।

ইতোমধ‌্যে কলেজের নামীয় ৮.৫৪ একর জমিতে কলেজ প্রতিষ্ঠাকল্পে উপজেলার তারাবুনিয়া এলাকায় সাইন বোর্ড উঠেছে। ৪ তলা বিশিষ্ট একাডেমিক ভবন নির্মাণের জন‌্য প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। আভ‌্যন্তরীণ চলাচল রাস্তা ও কানেক্টিং সড়কের জন‌্য কোটি টাকা ব‌্যয়ে প্রকল্পও নেওয়া হয়েছে। কলেজের জমির ডিজিটাল সার্ভে ম‌্যাপ ও থ্রিডি মাস্টার প্লান সম্পন্ন হয়েছে। সে অনুযায়ী কলেজের উন্নয়ন কাজ চলমান।

আলীকদমের বুকে উচ্চশিক্ষা বিস্তরের জন‌্য ৪২ বছরের অচলাতয়ন কেটে গেছে। আলীকদম কলেজ প্রতিষ্ঠা স্বপ্ন নয়; বাস্তব।

কলেজের মূল ক‌্যাম্পাস নির্মাণ সম্পন্ন না হওয়ায় ২০২৩-২০২৪ শিক্ষাবর্ষে উপজেলা সদরের পানবাজারস্থ টাউন হলকে কলেজের অস্থায়ী ক‌্যাম্পাস হিসেবে চালু করা হয়েছে। মূল ক‌্যাম্পাসে একাডেমিক ভবন-১ নির্মাণ শেষ হলেই স্থায়ী ক‌্যাম্পাসে শীঘ্রী স্থানান্তর হবে ‘আলীকদম কলেজ’; ইনশাআল্লাহ।

চলতি শিক্ষাবর্ষে ৬০ জনের অধিক শিক্ষার্থী মানবিক, বাণিজ‌্য ও বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়েছে। ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা আলীকদম কলেজ প্রতিষ্ঠালগ্নে প্রথম ব‌্যাচের শিক্ষার্থী হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে!

সকলেরর সম্মিলিত পরিশ্রমের ফলে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বকোণে অবস্থিত পার্বত্য জনপদ আলীকদমে যে পরমা মুক্তির অচলপ্রতিষ্ঠা হয়েছে, তাহা স্তব্ধ, তা নির্ব্বাক্, তা দীন, তা দিগম্বর, তা শাশ্বত! তাকে বলীর বাহু ও ক্ষমতাশালীর স্পর্দ্ধা স্পর্শ করতে পারেনি। পারবেওনা ইনশাআল্লাহ।

‘আলীকদম কলেজ’ প্রতিষ্ঠার বিরলভূষণ বিশালতার মধ্যে সকলেই আত্মনিয়োগ করেছেন। তাই আলীকদম কলেজ শিক্ষানুরাগী আলীকদমবাসীর মধ্যে জাগিয়েছে আলোর দিশা!

প্রতিবেদন: মমতাজ উদ্দিন আহমদ, আহ্বায়ক, জনসংযোগ  ‍উপ-কমিটি, আলীকদম কলেজ ও সভাপতি, আলীকদম প্রেসক্লাব, আলীকদম, বান্দরবান পার্বত‌্য জেলা।