। মমতাজ উদ্দিন আহমদ ।
পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্যতম মুরুং উপজাতীয় সম্প্রদায়ের বানান ও উচ্চারণ নিয়ে ইদানীং বেশ তারতম্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সঠিক উচ্চারণ ‘মুরুং’ নাকি ‘ম্রো কিংবা ম্রু’? এ নিয়ে সাম্প্রতিককালের বিভিন্ন জনের উচ্চারণ ও লেখনীতে বেশ তারতম্য দেখা গেছে।
উপমহাদেশের বিভিন্ন ইতিহাস গ্রন্থ, জার্নাল ও দলিল দস্তাবেজে পাওয়া গেছে এ উপজাতির নানারূপ বানান। নিন্মে এর সংক্ষিপ্ত রূপ তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সরকারের ১৯৯১ ইং সনের পরিসংখ্যানে পার্বত্য চট্টগ্রামে ২২,০০১ জন উপজাতি নিজেদের নামের পর “মুরুং” এবং মাত্র ১৬৬ জন নিজেদের নামে পরে “ম্রো” লিখেন। ঐতিহাসিক Arthur P. Phayre তাঁর রচনায় মুরুংদের নামের বানান ‘ম্রো’ (Mro) ও ‘ম্রু’ (Mru) লিখেছেন (দেখুন- History of Burma (1883), পৃষ্ঠা ৪৩, ৪৭)।
Traditional occupations of indigenous and tribal peoples: emerging trends, By- International Labour Office এর রচনায় “Mrung” লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।
The tribes and castes of Bengal: Ethnographic glossary, Volume 2 (1992), By- Sir Herbert Hope Risley তাঁর লেখায় ’Mrung’ লিখেছেন। এছাড়াও Population Census of Pakistan, 1961– এ ‘Mrung’ লেখা হয়েছে।
Journal of the Indian Anthropological Society, Volume 28, Issues 1-2 এর ৪৬ পাতায় যথাক্রমে ‘Mrung’, ‘Murung’, ‘Murong’ লেখা হয়েছে।
বাংলাপিডিয়াতে ‘মুরং’ এবং ‘ম্রো’ বানান লেখা হয়েছে এবং সেখানে তাদেরকে আলাদা দু’টি সম্প্রদায় হিসেবে তুলে ধরা হয়।
Encyclopaedia Indica: India, Pakistan, Bangladesh, Volume 100 ১০০ এর পৃষ্ঠা নং- ১২৭, ১৪৬ ও ১৫৫ পৃষ্ঠায় ‘Mrung’; Social research in East Pakistan, by- Pierre Bessaignet, assatic Society of Pakistan, 1960 এর পৃষ্ঠা নং- ১২৪, ১২৬ ও ১২৭ পৃষ্ঠায় ‘Mrong’ ও পৃষ্ঠা নং- ১২০, ১২৭ পৃষ্ঠায় ‘Mrung’ এবং ১২৭, ১২৮ ও ১২৯ পৃষ্ঠায় ‘Mro’ লেখা হয়েছে।
Francis Buchanan in southeast Bengal, ১৭৯৮ এর ৩৪, ৭৫ ও ৭৭ পৃষ্ঠায় ‘Moroong’, The Chittagong Hill Tracts: living in a borderland, by- Willem van Schendel, এর পৃষ্ঠা ১১৩, ১১৪ ও ৩০৪ পৃষ্ঠায় ‘Mru’ এবং Encyclopaedia of Indian tribes, By S.S. Shashi পৃষ্ঠা নং- ৫০ এ ‘Morung’ লিখেছেন।
“ইউরোপীয়ানদের মধ্যে ফ্রান্সিস বুকানন যখন ১৭৯৮ খ্রিস্টাব্দের ৯ই এপ্রিল তারিখ প্রথম ছয় জন ম্রোর দেখা পেয়েছিলেন তখন তিনি জানতে পারেন যে, ‘রাখাইনরা তাদেরকে ‘ম্রু (Mru)’, বর্মীরা ‘ম্যু (Myoo)’, বাঙ্গালীরা ‘মরুং (Moroong) এবং তারা নিজেদেরকে ‘মরুসা (Moroosa)’ বলে থাকেন।”
এখানে উল্লেখ্য যে, পার্বত্য চট্টগ্রামের বিশিষ্ট মুরুং নেতা, সাবেক স্থানীয় সরকার পরিষদ সদস্য ও মুরুং বাহিনীর ভূতপূর্ব কমান্ডার প্রয়াত বাবু মেনলে মুরুং এক আলাপচারিতায় ১৯৯৯ সালের সেপেম্বর মাসে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক গবেষক ও সাংবাদিক আতিকুর রহমানকে বলেন, “যদি প্রকৃত চরিত্রের ভিত্তিতে উপজাতি নির্ধারণ করা হয়, তাহলে অন্য অনেকের চেয়ে বাস্তব উপজাতি আমরাই। আমাদের সরাসরি উপজাতি স্বীকৃতি না দিয়ে ‘ম্রু’দের দলে ব্রেকেটভূক্ত করা সঠিক মূল্যায়ন নয়।” মেনলে মুরুং এর এই বক্তব্য দেওয়ার সময় আমি নিজে উপস্থিত ছিলাম।
আরো অসংখ্য প্রাচীন জার্নাল, সাময়িকী ও দলিল ছাড়াও সাম্প্রতিককালের বিভিন্ন সংবাদপত্র, সাময়িকী ও ব্লগে ‘মুরুং’ নামের বানান নিয়ে ভিন্নতা লক্ষ্য করা গেছে। এখনো বিভিন্ন সংবাদপত্রে ‘ম্রো, ম্রু, মুরং ও মুরুং বানান লিখা হচ্ছে। কলেবর বৃদ্ধির আশংকায় আমরা এসব চিত্র তুলে ধরা থেকে বিরত থাকলাম।
তথ্যসূত্র : মমতাজ উদ্দিন আহমদ রচিত ও সম্পাদিত “পার্বত্য চট্টগ্রমের মুরুং উপজাতি” শীর্ষক বইয়ের ২৩, ২৪, ২৫ ও ২৬ পৃষ্ঠা থেকে সংকলিত।
আপনার মতামত লিখুন :