বানরের দুষ্টমি


Momtaj Uddin Ahamad প্রকাশের সময় : ডিসেম্বর ১, ২০২৩, ৩:৫৮ পূর্বাহ্ন /
বানরের দুষ্টমি

।। তাহসিনা মমতাজ ওহী ।।

অনেক দিন আগের কথা। বনের পশুপাখি এবং মানুষের মধ্যে খুব ভালো বন্ধুত্ব ছিল। মানুষ পশুপাখির ভাষা বুঝতো। পশুপাখিরাও মানুষের ভাষা বুঝতো। তারা একে অপরকে বিপদে পড়লে সাহায্য করত।

তোতা, শালিক, ময়না, দোয়েল, কোকিল, চড়ই আরও বিভিন্ন ধরনের পাখি গাছের উঁচু ডালে বসে মানুষকে পাহারা দিত। তারা মানুষের কোনো বিপদ দেখলে সাবধান করে দিতো। সাপ বনে রাস্তা খুঁজে মানুষকে সাহায্য করতো। কুকুর জুম চাষে, কৃষিকাজে এবং শিকারের সময় মানুষের সঙ্গী হতো।

বানর, বেবুন, শিম্পাঞ্জি, চিতাবাঘ, সিংহ প্রভৃতি পশুপাখিও মানুষকে সাহায্য করতো। বিনিময়ে মানুষ তাদেরকে খেতে দিত। দিন শেষে তারা পশু-পাখিদের সঙ্গে গল্পগুজব করতো।

পশুদের মধ্যে বানর খুব দুষ্ট স্বভাবের ছিলো। সে অকারণে বনের পশুপাখিদের বিরক্ত করতো। সারাদিন পরিশ্রম করে হরিণ যখন বিশ্রাম করছে, তখন বানর এসে তার লেজ ধরে টান দিতো। গরু ঘাস খাচ্ছে, বানর এসে তার পিঠে চড়ে বসতো।

তোতা, শালিক, ময়না, দোয়েল, কোকিল, চড়ুই আরও বিভিন্ন ধরনের পাখি যখন গাছের ডালে বসতো, তখন বানর এসে ডাল নাড়া দিতো। চিতাবাঘ যখন ঘুমাতো, তখন বানর ঢিল মেরে জাগিয়ে দিতো।

একদিন একজন মানুষ বনে ঘুরতে গিয়ে দেখল, মাটি ফুঁড়ে পানি বের হচ্ছে। পানির জোর ক্রমশঃই বেড়ে যাচ্ছে এবং একটি নদী হয়ে যাচ্ছে। নদী উপচে বনের মধ্যে পানি ঢুকতে লাগলো। মানুষটি ভাবলো এভাবে কিছুক্ষণ চললে সমস্ত বন ডুবে যাবে। বনের সব পশুপাখি মরে যাবে। মানুষটি তখন আল্লাহর কাছে দুই হাত তুলে সাহায্যের জন্য প্রার্থনা করলো। গায়েবী আওয়াজ এলো; একটা বড় ঢাকনা দিয়ে পানির উৎস-মুখটা বন্ধ করে দাও। লোকটি একটা বড় ঢাকনা এনে গর্তের মুখ বন্ধ করে দিলো। পানি বন্ধ হলো। বনের পশুপাখিরা বিপদের হাত থেকে বাঁচল।

বানর দূরে দাঁড়িয়ে লোকটার কাজ দেখছিল। সে ভাবল, ঢাকনা দিয়ে মানুষটি নিশ্চয়ই কোনো খাবার লুকিয়ে রেখেছে। মানুষটি চলে গেলে বানর দৌঁড়ে এসে ঢাকনাটা তুলে ফেললো। অমনি গর্ত থেকে গলগল করে পানি বের হতে শুরু করলো। পানির তোড়ে বানর ভেসে গেলো।

বনের পশুরা সবাই নারিকেল গাছে উঠে বসল। একদিন যায়, দুইদিন যায়, এভাবে পাঁচদিন চলে গেল। পানি নেমে যাওয়ার কোনো লক্ষণ নেই। পানি কেবল বাড়ছেই। সেই সঙ্গে আরও প্রচন্ড ঝড়-বৃষ্টি হচ্ছে। বনের পশুরা সবাই ভয়ে অস্থির হয়ে গেল। বেবুন সবচেয়ে বেশি ভয় পেল। বেবুন ভয়ে এমন চেঁচামেচি শুরু করলো যে, তার গলা ক্রমে মোটা হয়ে গেল এবং তার কন্ঠস্বর গর্জনের মতো হয়ে গেল। সেই থেকে বেবুনের কন্ঠস্বর ঐ রকমই রয়ে রয়েছে।

কিছুক্ষণের মধ্যে সারা বন পানিতে ভরে গেলো। পশুরা কান্নাকাটি শুরু করলো। তারা সাহায্যের জন্য মানুষের কাছে ছুটে এলো। বনের মধ্যে নারকেল গাছগুলো ছিল সব চেয়ে উঁচু। মানুষ পশুদের বলল, “তোমরা সবাই নারিকেল গাছের মাথায় গিয়ে বসো।” তাহলে পানি আর তোমাদের ক্ষতি করতে পারবে না।

বনের পানি কমতে লাগল। বনের পশুরা নামার জন্য অস্থির হয়ে পড়ল।

মানুষরা বলল, বনের পানি একেবারে কমে না যাওয়া পর্যন্ত কেউ নামবে না। প্রথমে নামল মানুষ। তারপর পশুপাখিরা নামল। শীতে সবাই কাঁপতে লাগল। মানুষরা তখন চকমকি পাথর ঘষে আগুন জ্বালাল। সবাই আগুন পোহাতে লাগলো। কিছুক্ষণ পর আগুন নিভে গেলো।

মানুষরা আবার আগুন জ্বালানোর চেষ্টা করলো। কিন্তু জ্বালাতে পারলো না। মানুষরা চকমকি পাথর খুঁজে পেল না। তাই তারা রেগে গেলো। পশুপাখিরা বললো, কুমিরের পেটে চকমকি পাথর আছে। সে চকমকি পাথর নিশ্চয় খেয়েছে। সে লোকটি কুমিরকে হা করতে বললো। কুমির ভয়ে তার জিভ খেয়ে ফেললো। ফলে কুমিরের জিভ ছোট হয়ে গেলো। সেজন্য আজো কুমিরের জিভ অন্যান্য জীবের চেয়ে ছোট।

এই প্রচণ্ড বন্যা এবং ঝড়-বৃষ্টির পর একটা বিরাট পরিবর্তন দেখা দিল। পশু-পাখি এবং মানুষ একে অপরের কথা বুঝতো না। বানরের দুষ্টুমির জন্য এই পরিবর্তন দেখা দিল। বানর যদি ঢাকনা খুলে না দিত তাহলে বন্যা হতো না।

লেখক পরিচিতি: তাহসিনা মমতাজ ওহী, পিতা: মমতাজ উদ্দিন আহমদ, আলীকদম, বান্দরবান।