রূপমুহুরী ঝর্ণা -মমতাজ উদ্দিন আহমদ


Momtaj Uddin Ahamad প্রকাশের সময় : ফেব্রুয়ারী ৪, ২০২৪, ১২:৫৭ অপরাহ্ন /
রূপমুহুরী ঝর্ণা -মমতাজ উদ্দিন আহমদ

গভীর বনরাজিনীলার বেষ্টন-অন্তরালে থাকা রমণীয়-স্বপ্নবৎ-চিত্রবৎ একটি সুরম্য ঝর্ণার নাম ‘রূপমুহুরী’। প্রায় ১০০ ফুট উঁচু পর্বতের পাথুরে ঢাল থেকে ঝরে পড়ছে রূপমুহুরীর শীতল পানি। বর্ষায় ঝর্ণাটির পানির পরিমাণ বেশী থাকে। শীতমৌসুমে একটু কমে যায়। তবে বছরজুড়েই ঝর্ণার পানির কমতি নেই।

আলীকদম উপজেলায় মাতামুহুরী নদী ও তৈনখাল অববাহিকায় অনেকগুলো ঝর্ণা-জলপ্রপাত রয়েছে।

‘রূপমুহুরী’ মাতামুহুরী নদী অববাহিকার পোয়ামুহুরী বাজার নিকটবর্তী প্রাকৃতিক অপার সৌন্দর্যমন্ডিত একটি নজরকাড়া ঝর্ণা। এ ঝর্ণাটির উচ্ছ্বলসমীরণ উচ্ছ্বসিত হয়ে সেখানকার ভূপ্রকৃতিকে বিচিত্র বাসন্তী শ্রীতে বিভূষিত করেছে।

মূলত: পৃথিবীর সকল ঝর্ণাগুলিই স্বপ্নবৎ সুন্দর! ঝর্ণাগুলোর প্রাকৃতিক নান্দনিকতা কেবল ঝর্ণানুরাগীদের তৃপ্তিহীন আকাঙ্ক্ষার স্পন্দিত পরিতপ্ত কোমল হৃদয়টুকুর অভ্যন্তরে! পাহাড়ি ঝর্ণা সৌন্দর্য অনুরাগী দর্শনার্থীকে হৃদয়হিল্লোলে পূর্ণ করে দেয়।

রূপমুহুরী ঝর্ণার সৌন্দর্য বর্ণনাতীত। ডিম্বাকৃতির পাথুরে দেয়ালের অন্তত একশ’ ফুট উঁচু হতে ঝরে পড়ছে ‘রূপমুহুরী ঝর্ণা’র স্বচ্ছ পানির ধারা। এ ঝর্ণার পানির গন্তব্য মাতামুহুরী নদীতে। সারাবছর ঝম ঝম কলকল রবে এ ঝর্ণারাণীর পানির তীব্রবেগে অবিরাম বৃষ্টিরমত ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ছে পাথুরে ভূমিতে।

সুউচ্চ পাহাড় থেকে রূপমুহুরী ঝর্ণার ঝরে পড়া পানিতে বাতাসের গতিবেগ মিশে কুন্ডলী পাকিয়ে প্রতিনিয়ত এক মনোমুগ্ধকর শৈল্পিক জলবিন্দু সৃষ্টি হয়। বৃত্তকারে পাথরে ঘেরা পাহাড়ের বুকে এ ঝর্ণাদেবী যেন চঞ্চল প্রবাহে নিজের বীরত্ব প্রকাশ করছে অহর্নিশ।

দিনের মধ্যভাগে সূর্যের কিরণ যখন রূপমুহুরী ঝর্ণার বাষ্পীয় জলে পড়ে তখন প্রায়শই তৈরী হয় রংধনু। এ যেন এক দুর্দান্ত অমলনি দৃশ্য। নিজের চোখে না দেখলে যা বিশ্বাস করা যায় না।

এ ঝর্ণা রাণী যেন অবিরাম কেঁদে স্বচ্ছ নীরে ভাসছে অনন্ত কোন বিরহ বেদনায়! রূপমুহুরী ঝর্ণার বিরহের জলে ভিজে পর্যটকগণ আনন্দে আত্মহারা হন। 

উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৪৪ কিলোমিটার দূরে পোয়ামুহুরী এলাকায় মাতামুহুরী নদীর কাছাকাছি রূপমুহুরী ঝর্ণার অবস্থান। পোয়ামুহুরী এলাকায় একাধিক ঝর্ণা আছে। পোয়ামুহুরী বাজার সংলগ্ন ঝর্ণাটি ‘রূপমুহুরী ঝর্ণা’ নামে পরিচিতি।

প্রাকৃতিক এ ঝর্ণাটি দেখতে পোয়ামুহুরী বাজার হতে উর্ধ্বগামী পাকা সিঁড়ি বেয়ে এবং পাহাড়ি ঢালু পথ পাড়ি দিয়ে যেতে হয়। এখানে সতর্কভাবে পা ফেলে চলতে হয়।

* যেভাবে যাবেন: দেশের যেকোন প্রান্ত থেকে আলীকদম বাস স্টেশন আসতে হবে। এরপর বাইক, জীপ গাড়ি কিংবা অন্যকোন বাহনযোগে আলীকদম-কুরুকপাতা-পোয়ামুহুরী সড়কপথে খেদারঝিরি (বিদ্যামনি পাড়া সপ্রাবি)তে নামতে হবে। খেদার ঝিরি এলাকা থেকে মাতামুহুরী নদীর নীচের দিকে ১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত পোয়ামুহুরী বাজারে যেতে হবে। পোয়ামুহুরী বাজার থেকে ৫/৭ মিনিট হেঁটে রূপমুহুরী ঝর্ণায় যাওয়া যায়।

* নৌপথে যাত্রা: মাতামুহুরী ব্রিজ ঘাট থেকে মাতামুহুরী নদীপথেও রূপমূহুরী ঝর্ণায় যাওয়া যায়। সেক্ষেত্রে নৌকাযোগে>কুরুকপাতা বাজার>পোয়ামুহুরী বাজার>রূপমুহুরী ঝর্ণা।