মমতাজ উদ্দিন আহমদ, আলীকদম (বান্দরবান)
এমএনপি। পুরো নাম- ‘ম্রো ন্যাশনাল পার্টি’। পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবান জেলার আলীকদমের বিলুপ্ত একটি মুরুং সন্ত্রাসী সংগঠনের সংক্ষিপ্ত নাম। ২০০৯-১০ সালে মুরুংদের মুক্তির জন্য সশস্ত্র সংগ্রামের ঘোষণা দিয়ে মেনরুম ম্রো নামের এক যুবক ‘ ম্রো ন্যাশনাল পার্টি’ (এমএনপি) নামে এ সশস্ত্র গেরিলা গ্রুপ গঠন করেছিল।
এমএনপির প্রচারপত্রে বলা হয়, এ সংগঠন প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ২০০৯ সালে। সশস্ত্র গেরিলা এ গ্রুপের চাঁদাবাজি ও হত্যা-সন্ত্রাসের কথা আলীকদমে জানাজানি হয় ২০১১ সাল থেকে। একপর্যায়ে চাঁদা আদায়ে বাধা এলে এমএনপি সদস্যরা বান্দরবান পার্বত্য জেলার আলীকদম, নাইক্ষ্যংছড়ি ও থানচি এলাকায় চাঁদাবাজি, অপহরণ ও সন্ত্রাসী তৎপরতা শুরু করে।
এরপর শুরু হয় নিরাপত্তা বাহিনীর তৎপরতা। একের পর এক সেনা বাহিনীর হাতে আটক হতে থাকে এমএনপির সদস্যরা। এ সময় দেশের স্থানীয়, আঞ্চলিক এমনকি জাতীয় পত্র-পত্রিকার শিরোনাম হতে থাকে সংগঠনটির নানান সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের খবর!
২০১১ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে অসংখ্য সন্ত্রাসী ঘটনার পর ২০১৫ সালের ৫ নভেম্বর সেনাবাহিনীর মধ্যস্থতায় সরকারের কাছে আত্মসমর্পন করেন এমএনপি সদস্যরা।
এমএনপির সদর দপ্তর কোথায় ছিলো!
বান্দরবানের আলীকদমের দুর্গম পাহাড়ি এলাকা মেনসিংপাড়ার অদূরে একটি পাহাড় চূড়ায় ‘সদর দপ্তর’ ছিল বলে নিরাপত্তা বাহীনরি বরাতে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ পায়। প্রতিষ্ঠার পর মেনসিং পাড়ায় সদর দপ্তর স্থাপন স্থাপন করে মেনরুম ম্রো ক্যাডার রিক্রুট এবং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পরিচালনা করে আসছিলেন।
এ সময় বিভিন্ন মুরুং পাড়ায় পাড়ায় এমএনপি সদস্যরা গিয়ে পার্টির খরচ চালানোর জন্য অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে বিপুল অঙ্কের চাঁদা আদায় করতো। একপর্যায়ে চাঁদা আদায়ে বাধা এলে এমএনপি সদস্যরা বান্দরবান পার্বত্য জেলার আলীকদম, নাইক্ষ্যংছড়ি ও থানচি এলাকায়ও চাঁদাবাজি, অপহরণ ও সন্ত্রাসী তৎপরতা শুরু করে।
এমএনপি’র প্রতিষ্ঠাতাকে হত্যা ও দ্বিধাবিভক্তি:
মুরুংদের মুক্তির জন্য সশস্ত্র সংগ্রামের ঘোষণা দিয়ে মেনরুম ম্রো নামের এক যুবক ‘ ম্রো ন্যাশনালিস্ট পার্টি’ (এমএনপি) গঠন করলেও সগোত্রীদের কাছেই তার পতন হয় নির্মমভাবে।
এমএনপির আত্মপ্রকাশের পর থেকে সাধারণ ম্রো নেতারা এ ধরনের কর্মকা-কে হঠকারিতা বলে প্রচার করে এর বিরুদ্ধে জনমত গঠনে উদ্যোগী হন।
এ উদ্যোগে সাড়া দেন সাধারণ মুরুং জনগোষ্ঠী। ফলে সগোত্রয়ীদের কাছেই ক্রমান্বয়ে কোনঠাসা হয়ে পড়তে থাকে এমএমপি। পাশাপাশি এমএনপি বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার পাশাপাশি সামাজিকভাবে জনমত গঠনে সেনা তৎপরতা শুরু হয়। পত্র-পত্রিকায় এমএনপির নানান ধরণের অপরাধমূলক কর্মকান্ডের খবর প্রকাশ হতে থাকে।
এ সময় নিজেদের মধ্যে দ্বিধাবিভক্তি ও গ্রুপিং-এ জড়িয়ে পড়ে এমএনপির সদস্যরা। ফলে ২০১২ সালের ৫ এপ্রিল রাতে আলীকদম উপজেলার পোয়ামুহুরী মেনচিং পাড়ার এমএনপি ঘাটিতে তিনজন কারবারি একযোগে হামলা চালিয়ে এমএনপির প্রতিষ্ঠাতা ‘মেনরুম’কে দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। ওই সময় মেনরুং ম্রো দেহরক্ষী পাশের কক্ষে ল্যাপটপে কাজ করছিল। সে পাল্টা আক্রমণ চালিয়ে একজন ম্রো কারবারিকে গুলিবিদ্ধ করলেও ওই তিন কারবারি সশরীরে পালিয়ে আসতে সক্ষম হন।
পরে এএনপি প্রধান মেনরুমের কয়েক টুকরো দেহখন্ডকে মাটি চাপা দিয়েছে ক্ষুদ্ধ প্রতিপক্ষরা। এ ঘটনার পর ২০১১ সালের এপ্রিল আলীকদম জোনের সেনা সদস্যরা দুর্গম কুরুকপাতা-পোয়ামুহুরীর এলাকার মধ্যবর্তী মেনচিং পাড়ায় অভিযান চালায়। অভিযানে বন্দুক, গুলি, সোলার প্যানেল, ল্যাপটপসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করে সন্দেহভাজন ১০ জনকে আটক করে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ৪ জনকে গ্রেফতার দেখিয়ে জেলহাজতে পাঠানো হয়।
সংগঠনের প্রধান মেনরুম ম্রো নিহত হওয়ার এক সপ্তাহের মাথায় সেনাবাহিনীর আলীকদম জোনের পোয়ামুহুরী ক্যাম্পে আত্মসমর্পণ করে এমএনপি’র ৪২ সদস্য। পরে আরেক অভিযানে একই বছরের ৮ মে পোয়ামুহুরী ইয়াংরিং মুরুং কার্বারী পাড়া থেকে ৭টি গাদা বন্দুক, ১টি পিস্তল, গান পাউডার ৩শ’ গ্রাম, বল্লম/ছোড়া- ৮টি, গান পাউডার তৈরীর কেমিক্যাল, অস্ত্র তৈরীর সরঞ্জামসহ এমএনপি সদস্য সন্দেহে ৭ মুরুংকে আটক করেছে।
এ সময় আলীকদম জোনের সেনা সদস্যরা আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। জিজ্ঞাসাবাদে নিহত এমএনপি প্রধান মেনরুম মুরুং লাশের সন্ধান পান সেনা সদস্যরা। পরে পোয়ামুহুরীর মেনচিং পাড়ার দুর্গম অরণ্য থেকে নিহত মেনরুমের মাটি চাপা লাশের কংকাল উদ্ধার করা হয়।
সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা নিহত হওয়ার পর এলাকায় আধিপত্ত বিস্তার নিয়ে সংগঠনটির সদস্যরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। কুরুকপাতা-পোয়ামুহুরী এলাকায় মেনরুম ম্রো (ছোট মেনরুম) এর নেতৃত্ত্বাধীন ‘মেনরুম গ্রুপ’ ও দোছারী-তৈনখাল এলাকায় লৌহব ম্রো র নেতৃত্বাধীন ‘লৌহব গ্রুপ’ নামে এ দুই অংশের পরিচয় জানাজানি হয়।
এই দুইগ্রুপ স্থানীয় ব্যবসায়ীদের আটক করে মুক্তিপন আদায় করা শুরু করে। সর্বশেষ গত ২০১৫ অক্টোবর মাসে মোহাম্মদ আলী ও মোঃ সাইফুল ইসলাম নামে দুই ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে ৩ লক্ষ টাকা মুক্তিপন আদায় করে এমএনপি সন্ত্রাসীরা।
অব্যাহত সন্ত্রাসী কর্মকা-ের কারণে সেনাবাহিনী এমএনপি বিরুধি অভিযান শুরু করে। নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে চরম আর্থিক সঙ্কট পড়ে এমএনপির দুই গ্রুপ। নিজ জনগোষ্ঠী মুরুংদেরও অসহযোগিতার সম্মুখীন হতে থাকে এমএনপি’র দুই গ্রুপ।
সংগঠনটির এ অপতৎপরতার কারণে ম্রো জনগোষ্ঠীরাও চিন্তিত ছিল। সাধারণ মুরুং জনগোষ্ঠী থেকে শুরু করে অধিকাংশ মুরুং নেতারাই চাননিন তাদের সন্তানেরা বিপথগামী হোক। ফলে সেনা বাহিনীর পাশাপাশি মুরুংদের সামাজিক সংগঠন ‘ম্রো সোস্যাল কাউন্সিল’ও বিপথগামী যুবকদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। ফলে সেনা তৎপরতায় এবং নিজ জনগোষ্ঠীর সদস্যদের অসহযোগিতাসহ নানামুখী টানাপড়েনে সংগঠনটির সদস্যরা আত্মসমর্পণের উপায় পথে পা বাড়ায়।
আত্মসমর্পন অনুষ্ঠান:
বহুল আলোচিত ম্রো ন্যাশনাল পার্টির (এমএনপি) আত্মসমর্পন অনুষ্ঠান ৫ নভেম্বর ২০১৫ খ্রিস্টাব্দে কুরুকপাতা বাজার এলাকায় মাতামুহুরী নদীর চরে অনুষ্ঠিত হয়। এ অনুষ্ঠানে এমএনপি’র দুই গ্রুপের ৭৯ জন সদস্য আত্মসমর্পন করে। এরমধ্যে মেনরুম গ্রুপের ৬৪ জন ও লৌহব গ্রুপের ১৫ সদস্য ছিল।
আত্মসমর্পন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং। আরো উপস্থিত ছিলেন জিওসি ২৪ পদাতিক ডিভিশন ও এরিয়া কমা-ার চট্টগ্রাম এরিয়া মেজর জেনারেল সফিকুর রহমান, এসপিপি, এফডব্লিউসি, পিএসসি, বান্দরবান রিজিয়নের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নকিব উদ্দিন আহমেদ ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা, আলীকদম জোন কমা-ার লে: কর্ণেল মিজানুর রহমান, ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক আবু জাফর ও পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান প্রমুখ। এছাড়া অন্যান্য সামরিক ও বেসমরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এ দিন আত্মসমর্পন অনুষ্ঠান হলেও এর আগেই আলীকদম জোনের কাছে এমএনপি’র কাছে থাকা অস্ত্র, গুলি, পোষক জমা দেওয়া হয়।
সেনাবাহিনীর কাছে জমা দেওয়া অস্ত্র ও সরঞ্জামের মধ্যে ছিল মেনরুম গ্রুপ থেকে গাদা বন্দুক ৩৬টি, কার্তুজ গুলি ৮৯টি, পোশাক ৬২টি ও কার্তুজ বন্দুক ১২টি।
লৌহব গ্রুপের পক্ষে জমা দেওয়া হয় কার্তুজ বন্দুক ১১টি, গাদা বন্দুক ২টি, কার্তুজ গুলি ১০টি ও পোষাক ১৪টি ও জুতা ২০ জোড়া।
আত্মসমর্পনকালে এমএনপির একাংশের কমা-ার মেনরুম সাংবাদিকদের জানান, ‘আশির দশকে ম্রো গোষ্ঠী শান্তিবাহিনী থেকে অভ্যন্তরীণ দ্বন্ধে বিতাড়িত হন। এরপর থেকে ম্রো সম্প্রদায় সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছিল। অধিক নিরাপত্তা এবং সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার লক্ষ্য নিয়ে তারা সশস্ত্র রাজনৈতিক সংগঠনটি গড়ে তুলেছিলেন। শুরুতেই দলের প্রতিষ্ঠাতা মেনরুম ম্রো সিনিয়র অন্তর্ঘাতী সংঘাতে নিহত হন। একে একে মারা যান কমপক্ষে ২৫ জন।’
মেনরুম বলেন, ‘শুরুতে আমাদের কমপক্ষে ৫০০-৬০০ সদস্য ছিল। অনেকে বিপথগামী হয়ে বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়েন। অনেকে মারা যান। অনেকে দল ছেড়ে দেন। শেষ পর্যন্ত আমরা ৭৯ জন আত্মসমপর্ণ করেছি।’
‘আমরা ভুল করেছিলাম। ভুল পথে পা বাড়িয়েছিলাম। মুরুং সোশ্যাল কাউন্সিলের মাধ্যমে আলাপ-আলোচনা করে আমরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছি। এখন আমরা যেসব দাবি দিয়েছি সেগুলো যেন সরকার সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনায় নেয় সেই অনুরোধ করছি।’ বলেন মেনরুম ম্রো ।
সেনাবাহিনী ও এমএনপির মধ্যে সমন্বয়কারীর কাজ করেন সামাজিক সংগঠন ম্রো স্যোশাল কাউন্সিলের সহ-সভাপতি ও থানছি উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান খামলাই ম্রো । তিনি অনুষ্ঠানে বলেন, ১৯৯৭ সালে শান্তি চুক্তির পর অন্যান্য উপজাতীরা সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পেলেও পিছিয়ে পড়ে ম্রো জনগোষ্ঠী।
তিনি জানান, এরপর তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে ম্রো নেতা ও সুয়ালক ইউপি চেয়ারম্যান রাংলাই ম্রো, জেলা পরিষদের সদস্য সিংইয়ং ম্রো ও সাবেক জেলা পরিষদ সদস্য অংপ্রু ম্রো সহ কয়েকজন সামাজিক সংগঠন ম্রো স্যোশাল কাউন্সিল গঠন করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং বলেন, স্বার্থান্বেষী মহল তাদের উসকানি দিয়ে বিভ্রান্ত করে ভুল বুঝিয়ে সশস্ত্র সংগঠন গড়ার পথে ঠেলে দিয়েছিল। কিন্তু ভুল বুঝতে পেরে তারা আত্মঘাতী পথ থেকে ফিরে এসেছে।
অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে এসব দাবি মেনে নেওয়া হবে বলে ঘোষণা দেন।
আত্মসমর্পন অনুষ্ঠানে সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল সফিকুল ইসলাম আত্মসমর্পণকারী সদস্যদের মধ্যে যারা লেখাপড়া ও বাংলা ভাষা জানেন তাদের মধ্যে ৪-৫ জনকে ৩-৪ মাসের মধ্যে চট্টগ্রাম সেনানিবাসে চাকরি দেওয়ার আশ্বাস দেন।
এ সময় তিনি বলেন, ম্রো সম্প্রদায়ের দাবি দাওয়া দেখলাম। আন্তরিকতা এবং সমঝোতার মনোভাব থাকলে এসব দাবি পূরণ কোনো বড় বিষয় নয়। আমরা সেনাবাহিনী পাহাড়ে কর্তৃত্ব করার জন্য আসিনি।
মেজর জেনারেল সফিকুর রহমান আরো বলেন, সেনাবাহিনীর সঙ্গে পাহাড়ে পিছিয়ে পড়া ও সংখ্যালঘু ম্রো জনগোষ্ঠীর একটা ঐতিহ্যগত সম্পর্ক ছিল এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। তাদের শিক্ষা, চিকিৎসাসহ বিভিন্ন কর্মকা- সেনাবাহিনী সৌহার্দ্য ও আন্তরিকতার সঙ্গে ম্রো দের পাশে থাকবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।
‘এমএনপি’র প্রচারপত্রে কী ছিলঃ
আত্মসমর্পন অনুষ্ঠানে এমএনপি’র চেয়ারপার্সন সীল দিয়ে মেনরুম ম্রো র স্বাক্ষরিত ১২ দফা দাবী সম্বলিত প্রচারপত্রে বলা হয়, “১৯৮৪-৮৫ সালে আলীকদম-লামা-নাইক্ষ্যংছড়ি ও থানচি থেকে মুরুংরা শান্তি বাহিনীকে বিতাড়িত করে। কিন্তু ১৯৯৭ সালে ২ ডিসেম্বর শান্তিচুক্তি সম্পাদনের পর মুরুং জনগোষ্ঠী সুবিধাবঞ্চিত হতে থাকে। পার্বত্য চুক্তিতেও ম্রো জনগোষ্ঠী উপেক্ষিত হয়। মুরুং জনগোষ্ঠীর জায়গা জমি বিভিন্ন সংস্থা, কোম্পানী ও ব্যক্তি বিশেষের দ্বারা জবর দখল হতে থাকে। তাই ম্রো জাতিগোষ্ঠীর অধিকার আদায়ে ব্রতী হয়ে ২০০৯ সালে ম্রো ন্যাশনাল ডিফেন্স পার্টি (এমএনডিপি) যাত্রা শুরু করে।”
এমএনপি কমান্ডার মেনরুম ম্রো ১২ দফা দাবিতে বলেন, এমএনপি সদস্যদের জন্য চাকরি, দলের বিভিন্ন কর্মকান্ডের জন্য যাদের সঙ্গে শত্রুতা সৃষ্টি হয়েছে তারা যেন কোনো ধরনের সংকটের সৃষ্টি না করে, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেওয়া, মামলা প্রত্যাহার, ম্রো সম্প্রদায়ের অধিবাসীদের জন্য বাগান লিজ দেওয়ার ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
আত্মসমর্পন অনুষ্ঠানে সেনা বাহিনীর প্রেস রিলিজঃ
আত্ম সমর্পন অনুষ্ঠানে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে দেওয়া প্রেস রিলিজে বলা হয়, “২০১০ সালের শুরুর দিকে মেনরুম ম্রো র নেতৃত্বে আলীকদম-থানচি উপজেলার গহীন অরণ্যে পোড়াপাড়া এলাকার ম্রো সম্প্রদায়ের ৪০/৫০ জন হতাশাগ্রস্ত মুরুং বেকার যুবককে একত্রিত করে ম্রো ন্যাশনাল পার্টি (এমএনপি) গঠিত হয়। এমএনপি তাদের সংগঠনের জন্য অর্থ সংগ্রহের লক্ষ্যে পোয়ামুহুরী, দোছড়ি এলাকা চাঁদাবাজি, স্থানীয় জনাসাধাারণ কে অপহরণ, হত্যা, গুমসহ নানাবিধ সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে জড়িত হয়।
ফলে গত কয়েক বছর ধরে এ এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা বিঘ্ন হচ্ছিল। এ বিপদগামী মুরুং যুবকদের পুনর্বাসনের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আনার লক্ষ্যে সেনাবাহিনীর বান্দরবান রিজিয়ন প্রচেষ্টা চালায়। এ ধারাবাহিকতায় সামাজিক একত্রীকরণের অংশ হিসেবে এমএনপির অস্ত্র ও সরঞ্জাম স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও জনপ্রতিনিধিদের কাছে জমা দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছে।”
প্রধান অতিথির বক্তব্যের সরকারের পক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর বলেন, আত্মসমর্পণ হওয়া ম্রো যুবকদের পুনর্বাসনে আনতে সরকার সব ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। তবে কী ধরণের ব্যবস্থা নেওয়া হবে তা পরবর্তীতে ম্রো নেতাদের সমন্বয়ে ঠিক করা হবে বলে তিনি তাঁর বক্তব্যে জানিয়েছিলেন।
আপনার মতামত লিখুন :