ঐতিহাসিক পার্বত্য জনপদ আলীকদম


Momtaj Uddin Ahamad প্রকাশের সময় : ফেব্রুয়ারী ১৭, ২০২৩, ৮:৫৮ পূর্বাহ্ন /
ঐতিহাসিক পার্বত্য জনপদ আলীকদম

মমতাজ উদ্দিন আহমদ

বিস্ময়কর হলেও সত্য যে, ‘আলীকদম’ নামক পার্বত্য এ জনপদের ঐতিহাসিক কিছু বিবরণ বাংলার সুলতানী আমল ও মোগল আমলের ইতিহাসের সাথে বিধৃত হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে যাঁরা লিখেছেন ও গবেষণা করেছেন তাঁদের লেখায় প্রাচীন আলীকদমে মানুষের আগমন-নির্গমণ নিয়ে নানান তথ্য উপস্থাপন করেছেন।

বিশেষ করে ১৫৫০ সালে জোয়াও ডে বারোজ অংকিত প্রাচীন মানচিত্রে ‘আলীকদম’ এর পর্তুগীজ ভাষ্য হিসেবে ‘লোভাস ডোকাম’ নামের উল্লেখ পাওয়া যায়!

সৃজন, সমীক্ষা, গবেষণা ও অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে মানুষ সবসময় পূর্বপুরুষদের রেখে যাওয়া তথ্য-উপাত্তকে পুঁজি করেন। অতীতের সবকিছু নির্বিচারে গ্রহণ সবসময় সম্ভব নাও হতে পারে। তবে ইতিহাসের কিছু বিষয় মানুষকে শক্তি যোগায়। বর্তমান ও ভবিষ্যতের পথ রচনা করতে সহায়ক।

‘আলীকদম’ নামকরণ, এ জনপদের ইতিহাস-ঐতিহ্য, নৃ-তাত্ত্বিক পরিচয় উদ্ঘাটন করে এ অরণ্য জনপদের ডেভলেপমেন্ট প্রোফাইল তৈরী করেছিলাম আমি ২০০৫-’০৬ সালে। এ ক্ষেত্রে আমার দীক্ষাগুরু ছিলেন তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারুক আহমেদ।

আমার রচিত ‘আলীকদম উপজেলা ডেডেলপমেন্ট প্রোফাইল’কে উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাস্তবে রূপ দিতে সরকারের উর্ধতন মহলে পাঠান তৎকালীন ইউএনও ফারুক আহমেদ। পরবর্তীতে এই প্রোফাইলকে পরিমার্জন করে ‘প্রেক্ষণ: পার্বত্য চট্টগ্রাম গিরিনন্দিনী আলীকদম’ শীর্ষক একটি বই ২০০৮ সালের অমর একুশে বইমেলায় প্রকাশ করি। এটি আলীকদম উপজেলার ইতিহাস-ঐতিহ্য নিয়ে লেখা প্রথম বই।

এ বইয়ে আলীকদম নামকরণ ও ইতিহাস বর্ণনার চেষ্টা করেছি আমি। তবে সে সময়ে তথ্য-উপাত্তের যোগাড় এবং নানান সীমাবদ্ধতার কারণে আলীকদম নামকরণ ও ইতিহাস প্রসঙ্গে গভীর অনুসন্ধিৎসা-গবেষণা করার সুযোগ হয়নি।

মহাকালের মহাস্রোতে ‘সময়’ সবকিছুকে একসময় ছুঁড়ে ফেলে পালিয়ে বেড়ায়! কিন্তু সবস্মৃতি কী সময় মুছে দিতে পারে? সম্ভবত পারে না বলেই জনপদ ও সেই জনপদের মানুষের কিছু বিবরণ আমরা ইতিহাসের পাতায় পাতায় অতীতের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে দেখতে পাই।

এখন মহাকালের মহাস্রোতের টানে ভেসে যাওয়া ইতিহাসের পাতা কুড়িয়ে তা থেকে আমি আলীকদম সম্পর্কীত তথ্য-উপাত্তগুলোর রসদ যোগাড়ের চেষ্টা করছি।

আলীকদমের নামকরণ ও ইতিহাস ছাপার অক্ষরে রেখে যাওয়ার জন্য আমার আনুষ্ঠানিক প্রয়াস শুরু হয় ২০০৮ সালে ‘গিরিনন্দিনী আলীকদম’ বই প্রকাশের মধ্য দিয়ে। কিন্তু সে সময় আমার পক্ষে এ কাজ ছিল সত্যিই কঠিন ও কষ্টসাধ্য।

নিজের অক্ষমতার কথা জেনেও ২০০৫ সাল থেকে আলীকদম উপজেলার ইতিহাস রচনায় ব্রতী হই। এ সাধনায় আমি আলীকদম জনপদের পুরাতত্ত্বের ঐতিহাসিক উপদানের খন্ড-বিখন্ড তথ্য-উপাত্ত যোগাড় করে তুলে ধরবার চেষ্টা করেছি। ব্যক্তিগত কোন লাভ-লোকসানের কথা ভেবে নয়, শুধু চেয়েছি হারিয়ে যাওয়া কিছু ইতিহাসকে তুলে ধরতে।

বর্তমান প্রেক্ষাপটে বসে সুদূর অতীতের ইতিহাস তুলে আনা গভীর অনুসন্ধিৎসা প্রয়োজন। এ কাজ দুরহ ও শ্রমসাধ্য। পূর্বের ইতিহাসবেত্তাগণের লিখে যাওয়া ধারাবাহিকতা অনুসরণ করা হয়েছে এই গ্রন্থের ইতিহাসপর্বের আলোচনায়।

একথা স্বীকৃত যে, ইতিহাসের প্রাচীনতম কোন অধ্যায়ের আলোচনার ক্ষেত্রে ব্যাপকতর গবেষণা, অনুসন্ধান ও গভীর সমীক্ষার প্রয়োজন। সবকিছুকে নির্বিচারে গ্রহণ না করেও যুক্তিনির্ভর অনুমান ইতিহাস নির্ণয়ে সহায়তা করেন। ইতিহাস ও যুক্তির মাপকাঠিতে সুলতানী আমল, মোঘল আমল ও বৃটিশ আমলের ‘আলীকদম’কে ইতিহাসের আলোকে পর্যালোচনা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সে সিদ্ধান্তের অনুপম প্রকাশ ঘটবে আমার প্রকাশিতব্য ‘ভ্রমণ ও ইতিহাস-ঐতিহ্যে আলীকদম’ গ্রন্থে।

লেখক: মমতাজ উদ্দিন আহমদ, সভাপতি, আলীকদম প্রেসক্লাব, বান্দরবান পার্বত্য জেলা।