এভারেস্ট জয় করলেন বাংলাদেশের ডা. বাবর আলী


Momtaj Uddin Ahamad প্রকাশের সময় : মে ১৯, ২০২৪, ১২:৩৯ অপরাহ্ন /
এভারেস্ট জয় করলেন বাংলাদেশের ডা. বাবর আলী

সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটে মাউন্ট এভারেস্টের চূড়ায় ওঠেন তিনি।

।। মমতাজ উদ্দিন আহমদ ।।

বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেছেন বাংলাদেশের পর্বতারোহী বাবর আলী। আজ রোববার বাংলাদেশ সময় সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটে মাউন্ট এভারেস্টের চূড়ায় ওঠেন তিনি।

অভিযানের প্রধান সমন্বয়ক ফরহান জামান বিভিন্ন সংবাদ মাধ‌্যমকে এই তথ্য নিশ্চিত করেন।

পেশায় চিকিৎসক বাবর আলীর নেশা পর্বতাহরণ। তিনি ২০১৪ সাল থেকে হিমালয় রেঞ্জের ১১টি উচ্চ শৃঙ্গ জয় করেছেন।

তবে অভিযান কিন্তু এখনো শেষ নয়, বাবরের আসল লক্ষ্য শুধু এভারেস্ট নয়, সঙ্গে লাগোয়া পৃথিবীর চতুর্থ শীর্ষ পর্বত লোৎসেও। রোববার ক্যাম্প-৪ এ নেমে মাঝরাতে আবারও শুরু করবেন দ্বিতীয় লক্ষ্যের পথে যাত্রা। সব অনুকূলে থাকলে ভোরে পৌঁছে যাবেন এর চূড়ায়। 

এ লোৎসেতে ইতিপূর্বে কোনো বাংলাদেশি সামিট করেননি এবং কোনো বাংলাদেশি একই অভিযানে দুটি আট হাজারী শৃঙ্গ চড়েননি। তাই লক্ষ্য পূরণে হলে বাবার আলী করবেন এ বিপজ্জনক খেলায় বাংলাদেশের ইতিহাসের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা।

বাবরের অভিযানের দিনলিপি

বাবরের এভারেস্ট যাত্রার প্রধান সমন্বয়ক ফরহান জামান জানান, “এভারেস্ট অভিযানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হল একাধিকবার উচ্চতায় উঠানামা করে উচ্চতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া। কিন্তু কয়েকদিন অপেক্ষার পরও নেপালের দায়িত্বরত দল পথ তৈরি করতে পারেনি।

“তাই বাবর বিকল্প বেছে নেন, ১৬ এপ্রিল সামিট করেন ২০০৭৫ ফুট উচ্চতার লবুচে ইস্ট পর্বত। এরপর আবারো বেসক্যাম্পে ফিরে পর্বতের নিচ অংশের পথ খুলে গেলে ২৬ এপ্রিল বেসক্যাম্প থেকে যাত্রা শুরু করে ক্যাম্প-২ পর্যন্ত ঘুরে এসে শেষ করেন উচ্চতার সাথে মানিয়ে নেওয়ার পর্ব।”

জামান জানান, এরপরই ১৪ মে মাঝরাতে বেসক্যাম্প থেকে শুরু হয় বাবরের স্বপ্নের পথে যাত্রা।

“তিনি প্রথম দিনেই সরাসরি উঠে আসেন ক্যাম্প-২ এ, যার উচ্চতা ২১,৩০০ ফুট। পরিকল্পনা অনুসারে সেখানে দুইরাত কাটিয়ে বাবর ১৭ মে উঠে আসেন ২৪,৫০০ ফুট উচ্চতার ক্যাম্প-৩ এবং ১৮ মে আসেন ক্যাম্প-৪ এ।”

ফারহান বলেন, “২৬,০০০ ফুট উচ্চতার এই ক্যাম্পের উপরের অংশকে বলা হয় ডেথ জোন। অবশেষে ১৮ মে মাঝরাতে আবারো শুরু হয় বাবরের যাত্রা, এবং ভোরের প্রথম কিরণে ২৯০৩১ ফুট উচ্চতার মাউন্ট এভারেস্ট শীর্ষে উড়িয়ে দেয় বাংলাদেশের পতাকা।”

১৯ মে ভোরে ডেথ জোন নামে পরিচিত শৃঙ্গে আরোহণ করেন এবং মাউন্ট এভারেস্ট জয় করে ইতিহাস গড়েন বাবর আলী।

এভারেস্ট বেজক্যাম্পে বাবর (বাঁয়ে) ছবি: সংগৃহীত

ফরহান জামান বলেন, এভারেস্টের সঙ্গে লাগোয়া পৃথিবীর চতুর্থ শীর্ষ পর্বত লোৎসেও জয় করা জন্য শিগগির বাবর যাত্রা শুরু করবেন।

৩৩ বছর বয়সী বাবর আলীর বাড়ি চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার বুড়িশ্চর গ্রামে। তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ৫১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন।

অভিযাত্রীদের সঙ্গে বাবর আলী । ছবি: সংগৃহীত

পেশায় চিকিৎসক, নেশায় পর্বতারোহণ

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেছেন ৩৩ বছর বয়সী বাবর আলী। এরপর শুরু করেছিলেন চিকিৎসা পেশা। তবে থিতু হননি। ডাক্তারি ছেড়ে দেশ-বিদেশ ঘোরা শুরু করেন।

গত বছরের ১৩ এপ্রিল কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগর থেকে সাইকেলযাত্রা শুরু করেছিলেন বাবর আলী। এক মাসের চেষ্টায় প্রায় চার হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে তামিলনাড়ুর কন্যাকুমারী গিয়ে থেমেছিলেন তিনি। পথে যেতে যেতে ১৩টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মনোরম দৃশ্য অবলোকন করার সুযোগ হয়েছিল তাঁর। এর আগে ২০১৯ সালে পরিবেশ রক্ষার ব্রত নিয়ে বাংলাদেশের ৬৪ জেলা হেঁটে পার করেন তিনি। এসব অভিযান নিয়ে লিখেছেন বই।

সাইকেলিংয়ের পাশাপাশি এখন পর্যন্ত সারগো রি (৪ হাজার ৯৮৪ মিটার), সুরিয়া পিক (৫ হাজার ১৪৫ মি.), মাউন্ট ইয়ানাম (৬ হাজার ১১৬ মি.), মাউন্ট ফাবরাং (৬ হাজার ১৭২ মি.), মাউন্ট চাউ চাউ কাং নিলডা (৬ হাজার ৩০৩ মি.), মাউন্ট শিবা (৬ হাজার ১৪২ মি.), মাউন্ট রামজাক (৬ হাজার ৩১৮ মি.), মাউন্ট আমা দাবলাম (৬ হাজার ৮১২ মি.) ও চুলু ইস্ট (৬ হাজার ০৫৯ মি.) পর্বতের চূড়ায় উঠেছেন এই তরুণ।

এভারেস্ট অভিযানের শুরু যেভাবে

পৃথিবীর সর্বোচ্চ শিখর মাউন্ট এভারেস্টে প্রথম অভিযান পরিচালিত হয় আজ থেকে শতাধিক বছর আগে। ১৯৫৩ সালের ২৯ মে নেপালের শেরপা তেনজিং নোরগেকে সঙ্গে নিয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্টের চূড়ায় উঠেছিলেন নিউজিল্যান্ডের পর্বতারোহী এডমন্ড হিলারি। আর ২০১০ সালের ২৩ মে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্টের শীর্ষে ওঠেন মুসা ইব্রাহীম।

এরপর ২০১১ ও ২০১২ সালে দুবার এভারস্ট জয় করেন এম এ মুহিত। প্রথম বাংলাদেশি নারী হিসেবে ২০১২ সালের ১৯ মে এভারেস্টের চূড়ায় আরোহণ করেন নিশাত মজুমদার। একই মাসের ২৬ মে ওয়াসফিয়া নাজরীন জয় করেন এভারেস্ট। ২০১৩ সালের ২০ মে এভারেস্টজয়ী পঞ্চম বাংলাদেশি সজল খালেদ এভারেস্টচূড়া থেকে নেমে আসার সময় মারা যান।