আলীকদম ইউআরসি’র ইন্সট্রাক্টরের বিরুদ্ধে অধিদপ্তরে লিখিত অভিযোগ


Momtaj Uddin Ahamad প্রকাশের সময় : মে ৯, ২০২৩, ২:২৬ অপরাহ্ন /
আলীকদম ইউআরসি’র ইন্সট্রাক্টরের বিরুদ্ধে অধিদপ্তরে লিখিত অভিযোগ

অফিসে খাট পেতে বসবাস, প্রশিক্ষণের টাকা আত্মসাত, শিক্ষকদের হুমকী

প্রেসক্লাব ডেস্ক:
বান্দরবানের আলীকদমে উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের অফিসে খাট পেতে বসবাস করছেন ইন্সট্রাক্টর শাহাদত হোসেন চৌধুরী।

এতে বিব্রত অবস্থায় পড়তে হচ্ছে প্রশিক্ষণার্থী নারী শিক্ষকদের।

শিক্ষকদের হুমকী, প্রশিক্ষণের অর্থ আত্মসাত, শিক্ষকদের স্বাক্ষর জাল করে মিথ্যা অভিযোগ সৃজনসহ উপজেলার সরকারি কর্মসূচীগুলোতে অনুপস্থিত থাকার অভিযোগ উঠেছে এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।

তার নানান দুর্নীতির তথ্য তুলে ধরে উপজেলার কয়েকজন শিক্ষক প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ প্রেরণ করেছেন।

প্রাপ্ত অভিযোগে প্রাকশ, ২০১৯ সালের ২১ অক্টোবর উপজেলা রিসোর্স সেন্টারে ইন্সট্রাক্টর পদে যোগদান করেন শাহাদত হোসেন চৌধুরী।

এরপর তিনি ইউআরসি’র অফিস কক্ষে খাট পেতে বসবাস শুরু করেন। বহিরাগত মেয়ে নিয়ে অফিসে রান্না করান।

রান্নার কাজে উচ্চ ওয়াটের রাইস কুকার, কারি কুকার, ওয়াটার হিটার এবং শীতকালে রূম হিটার ব্যবহার করছেন ইউআরসি’র মিটার থেকে।

ব্যক্তিগত কাজে উচ্চ ওয়াটের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহার করায় প্রতিমাসে অধিক বিদ্যুৎ বিল দিতে হয় ইউআরসিকে।

অভিযোগপত্রে স্বাক্ষরকারী একজন শিক্ষক জানান, ইন্সট্রাক্টর শাহাদত হোসেন ২০১৯ সালের ২১ অক্টোবর আলীকদম ইউআরসিতে যোগদান করেন।

২০১৯-২০ অর্থবছরে তিনি বিষয়ভিত্তিক ইংরেজী, বাংলা ও বিজ্ঞান বিষয়ের ৩টি প্রশিক্ষণে শিক্ষকদের বর্ধিত টিএ বিল খাতের ২ লাখ টাকা আত্মসাত করেন।

এছাড়া এসব প্রশিক্ষণের ৯০ জন শিক্ষককে প্রশিক্ষণ ব্যাগ না দিয়ে ব্যাগ ক্রয়ের ৪৫ হাজার টাকা আত্মসাতের বিষয় ফাঁস হয়।

এরপর শিক্ষকদের অসন্তোষের মুখে ২০২০ সালের শেষের দিকে তড়িগড়ি করে আলীকদম ইউআরসি থেকে খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলা ইউআরসিতে তদবির করে বদলী হন।

এ অভিযোগে বলা হয়, ২০২২ সালে দ্বিতীয়বার যোগদানের পর ৬দিন ব্যাপী ‘গণিত অলম্পিয়াড ও বিজ্ঞান প্রশিক্ষণ’ এর অনুপস্থিত ১০ জন শিক্ষককে উপস্থিত দেখিয়ে ৬০ হাজার টাকা আত্মসাত করেন ইন্সট্রাক্টর শাহাদত।

প্রশিক্ষণার্থী শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ভাতার শীটে ব্লাঙ্ক স্বাক্ষর নেন। পরে সুবিধামত টাকার অংক লিখেন।

অনুসন্ধানে প্রকাশ, ২০২১ থেকে ২০১৯ এবং ২০২২ সাল থেকে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত উপজেলা পরিষদের মাসিক সমন্বয় কমিটির সভাসহ সরকারি কোন মিটিংয়েই উপস্থিত ছিলেন না এ কর্মকর্তা।

এমনকি জাতীয় দিবসে উপজেলা প্রশাসনের পুষ্প স্তবক অর্পন অনুষ্ঠানেও তাকে দেখা যায় না।

সম্প্রতি একই দপ্তরের সহকারি ইন্সট্রাক্টর মোহাম্মদ আলমগীরের বিরুদ্ধে ৩জন শিক্ষকের স্বাক্ষর জাল করে অধিদপ্তরের একটি মিথ্যা অভিযোগ সৃজন করেন এ কর্মকর্তা।

গত ৩০ এপ্রিল অধিদপ্তরের শিক্ষা ও গবেষণা শাখার সহকারি পরিচালক অভিযোগটির তদন্ত করে ঘটনাটি মিথ্যা মর্মে প্রমাণ পান।

রাতে ইউআরসি’র সামনে চেয়ার পেতে কয়েকজন জুনিয়র শিক্ষক ও উপজেলার একটি অফিসের জুনিয়র স্টাফদের নিয়ে আড্ডা দিতে দেখা গেছে এ কর্মকর্তাকে।

প্রায়সময় রাত ১০/১১ টার সময় ইউআরসি’র অফিসে তার বেডরূমে পাশ্ববর্তী হোস্টেলের শিক্ষার্থীদের আনাগোনা দেখা যায়।

এ ব্যাপারে শিক্ষকদের স্বাক্ষরিত অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, আবাসিক ছাত্রাবাস থেকে পঁঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রীদের রাতে অফিস বেডরূমে ডেকে আনেন ইন্সট্রাক্টর শাহাদত।

এর আগে ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের এক বালককে দত্তকের নামে কয়েকদিন বেডরূমে রাখার পর ছেলেটি পালিয়ে যায়।

জানা গেছে, ইউআরসি’র সরকারি মোটর সাইকেলটি ইন্সট্রাক্টর শাহাদাত ঢাকার বাসায় রেখেছেন।

এদিকে, আলীকদম ইউআরসিতে প্রতিমাসে মোটর সাইকেলের জ্বালানী ও মেরামত বিল পাশ করছেন। স্থানীয় শিক্ষকদের পেছনে বসে তিনি স্কুল ভিজিট করেন।

এ ব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা অফিসের সাবেক সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসার আশিষ কুমার মহাজন প্রতিবাদ করলে তাকে হুমকী দেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের ইন্সট্রাক্টর শাহাদত হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘আমার অফিসে পিয়ন নেই, তাই আমি অফিসে থাকি। অফিসের নিরাপত্তা দরকার।

‘আমার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্রে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে সবগুলো মিথ্যা’ বলে দাবী করেন তিনি।

উপজেলা পরিষদের মিটিংয়ে অনুপস্থিতির বিষয়ে তিনি বলেন, কিছু মিটিংয়ে আমি উপস্থিত ছিলাম, কিছু মিটিংয়ে আমার প্রতিনিধি মোহাম্মদ আলমগীর উপস্থিত থাকতেন।

L