মমতাজ উদ্দিন আহমদ
বান্দরবানের আলীকদম উপজেলায় প্রথম স্থাপিত শহীদ মিনারে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আর আসেন না কেউ। ফুলে ফুলে ভরে উঠেনা শহীদ মিনারটি। আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনের পাশে অযত্নে ও অবহেলায় পড়ে রয়েছে এটি।
জানা গেছে, ১৯৭৪ সালে এই উপজেলায় প্রথম শহীদ মিনার স্থাপন করা হয় আলীকদম আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠের একপাশে। আলীকদম সেনানিবাসের তৎকালীন ক্যাপ্টেন শাহজাহানের অনুপ্রেরণায় শহীদ মিনারটি স্থাপন করা হয়।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ১৯৭৪ সালের আগে উপজেলায় কোনো শহীদ মিনার ছিল না। ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ওই বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রথম শহীদ মিনারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়।
মূলত: তখন থেকে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো শুরু হয় আলীকদমে। ওই সময় বৃহত্তর ‘আলীকদম’ ছিল একটি ইউনিয়ন। পাকিস্তান আমলে আইয়ুব খান সরকর ‘গজালিয়া’ ও ‘আলীকদম’ কে মৌলিক ইউনিয়নের স্বীকৃতি দিয়ে লামা থানার অন্তর্ভূক্ত করে। তবে স্বাধীনতা পূর্বকালে আলীকদম ইউনিয়নে ভাষা শহীদদের স্মরণে ‘শহীদ মিনার’ নির্মিত হয়নি। দেশ স্বাধীনের তিনবছর পর আলীকদমে এই শহীদ মিনার নির্মিত হয়। তবে এটি এখন অযত্ন অবহেলায় পড়ে আছে।
২য় শহীদ মিনার যেভাবে হলো…
২০০৩ খ্রিস্টাব্দের ২১ ফেব্রুয়ারিতে আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে স্থাপিত শহীদ মিনারে ফুল দিতে যান ইউএনও ফারুক আহমেদ এর নেতৃত্বে উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এ সময় শহীদ মিনার স্থলে ছিলেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরাও।
মঙ্গলবার (২১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে এ ঘটনা জানতে চাইলে অনুস্মৃতির বর্ণনা দেন আলীকদমের সাবেক ইউএনও এবং যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হতে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা ফারুক আহমেদ।
তিনি জানান, ‘আমি ইউএনও হিসেবে আলীকদমে ২০০২ সালের অক্টোবরে আলীকদমে যোগদান করি। ২০০৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ মিনারে ফুল দিতে গেলে দেখি শহীদ মিনারটি একটি খাড়া স্তম্ভ। তখন নতুন শহীদ মিনার করার চিন্তা করি। পরে তৎকালীন এমপি বীর বাহাদুরের কাছে শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য অনুদান চাই। তিনি আমাকে কাজ শুরুর পরামর্শ দিলেন। এমপির সহযোগিতা, স্থানীয় অনুদান ও সরকারি প্রকল্প নিয়ে ২০০৪ সালে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আমি শহীদ মিনারটির নির্মাণ কাজ শুরু করি। ২০০৫ সালে আমার কর্মকালীন সময়েই এই শহীদ মিনারের কাজ শেষ হয়।’
এ শহীদ মিনার নির্মাণ কাজে ভারপ্রাপ্ত উপজেলা প্রকৌশলী হারুন-অর-রশীদের সহযোগিতায় এটির ডিজাইনার ছিলেন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক ভাস্কর জহর কুমার সিংহ।
জানা গেছে, সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে শহীদ মিনার স্থাপন করার পর কোনো দিবসেই প্রথম স্থাপিত শহীদ মিনারে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে বা ফুল দিতে যান না কেউ।
২১ ফেব্রুয়ারি আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবসে বিশ্বব্যাপী বাঙালি জাতি ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। দেশের সব শহীদ মিনারে জাতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবে ভাষা শহীদ সালাম বরকত রফিক ও জব্বারদের। শুধু খালি পড়ে থাকে আলীকদম উপজেলার প্রথম শহীদ মিনারটি!
প্রতিবছর বিভিন্ন জাতীয় দিবসে শহীদ মিনারগুলো ফুলের ছোঁয়া পেলেও আলীকদম উপজেলার প্রথম শহীদ মিনারটি পড়ে থাকে অযত্ন অবহেলায়।
এ প্রথম শহীদ মিনার হিসেবে এর রক্ষণাবেক্ষণ, মর্যাদা ও পবিত্রতা রক্ষা করা সকলের উচিত ছিল বলে অনেকেই মনে করেন।
এ ব্যাপারে আলীকদম আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আপ্রুমং মার্মা জানান, প্রথম শহীদ মিনারটির জায়গায় বিদ্যালয়ের নতুন একাডেমিক ভবন নির্মাণে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। তাই এটি তুলে ফেলতে হবে। তবে প্রথম এই শহীদ মিনারের গুরুত্ব রয়েছে। তাই আমরা এটি অপাসরণ করে স্কুল আঙ্গিনায় নতুনভাবে স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
আপনার মতামত লিখুন :