আলীকদমের আকাশে নতুন সূর্য!


Momtaj Uddin Ahamad প্রকাশের সময় : ডিসেম্বর ১৮, ২০২৩, ৮:১০ পূর্বাহ্ন /
আলীকদমের আকাশে নতুন সূর্য!

মমতাজ উদ্দিন আহমদ :

আপনারা যদি মীর জাফর আলী খানের সত্যিকারের ইতিহাস জানেন, তার বীরত্ব, তার গৌরবগাঁথা এবং তার আভিজাত্যে বিস্ময়ে হতবাক হবেন। অপরদিকে তাকে ঘিরে যদি আপনি পলাশীর ঘটনার মিল খুঁজেন, তাহলে কনট্রাস্ট করবেন কেন মীর জাফর আলী খান এমনটি করলেন! তিনি তো ভালো ছিলেন!

এই মীর জাফর দেশে-বিদেশে বিভিন্ন সময়, বিভিন্নভাবে রূপ পরিগ্রহ করেন। মীর জাফর যেমন রাষ্ট্র ব্যবস্থার অলিন্দে ঘাপটি মেরে থাকতে পারেন তেমনি যেকোন জেলা-উপজেলা-সমাজে এ প্রজাতির বসবাস থাকতে পারে।

তাদের হাল-হাকিকত এবং অবস্থাদৃষ্টে আপনি বুঝে নিতে পারবেন তাদের জন্মই হয়েছেন মীর জাফরী করার জন্য।

১৯৮২ সালের ৭ নভেম্বর সামরিক সরকারের আমলে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামে সৃষ্টি হওয়া উপজেলা হচ্ছে ‘আলীকদম’। যদিও এই আলীকদমের ইতিহাস-ঐতিহ্য ১৬৬১ সালের মোগল ইতিহাসের একটি করুণ অধ্যায়ের সাথে সম্পৃক্ত রয়েছে বলে ইতিহাসবেত্তাদের দাবী।

আলীকদমবাসী হিসেবে আমাদের চরম দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে, উপজেলা সৃষ্টির ৪১ বছর পরও আলীকদমে সামগ্রিমভাবে কোন উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেনি। অতীতে কলেজ সৃষ্টির জন্য সুবর্ণ সুযোগ থাকলেও কেউ এই কাজে এগিয়ে আসেনি।

‘ওরা’ ২০০০ সালের দিকে ‘প্রস্তাবিত আলীকদম কলেজ’ নাম দিয়ে চাঁদা তুলে সেই টাকা আত্মসাত করেছিল। এর আগে থেকেই পার্বত্য এই জনপদে আলীকদম প্রেসক্লাব প্রতিষ্ঠা এবং মাঠ সাংবাদিকতায় যুক্ত থাকার সুবাদে সেইসব করূণ ইতিহাস আমার জানা আছে।

বছর দশেক আগে আলীকদমের একজন তামাক ব্যবসায়ী হজ্ব করেছিলেন। হজ্ব থেকে ফেরার পর পূর্বের ন্যায় তার সুদের ব্যবসা, অগ্রীম দাদন ইত্যাদি পুরোদমে শুরু করেছিলেন। কথায় কথায় তিনি চাষীদের গালাগাল করতেন। সে সময় একজন কৃষককে রাগের চোটে তাকে বলতে শুনেছি এভাবে ‘এখন আমি গালি দিলে বলবে হাজি সাহেবের মুখ খারাপ; তাই গালি দিলাম না।’

এই হাজী সাহেবের কথার সাথে মিল রেখে আমিও বলছি- যে ক’জন ইতোমধ্যে আলীকদমে কলেজ প্রতিষ্ঠার বিরোধীতা করছেন, আমিও তাদেরকে গালি দিলাম না! শুধু পরম করুণময়ের কাছে তাদের শুভবুদ্ধির উদয় হওয়ার জন্য প্রার্থনা করছি।

আশার কথা হচ্ছে, ২০২৩ সালের শেষার্ধে এসে আলীকদম কলেজ প্রতিষ্ঠার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে পর্যাপ্ত জমিও দানপত্রের মাধ্যমে পাওয়া গেছে। কলেজ প্রতিষ্ঠার মূল প্রেরণাদানকারী হচ্ছেন পার্বত্যমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং, এমপি। এ কাজকে মাঠ পর্যায়ে ত্বরান্বিত করে গেছে সদ্য বিদায়ী ইউএনও জাবের মোঃ সোয়াইব।

মাঠ পর্যায়ের এই কাজকে বেগবান করতে জনাব জামাল উদ্দিন চেয়ারম্যান, মোহাম্মদ নাছির উদ্দীন চেয়ারম্যান, যুবনেতা অংশেথোয়াই মার্মাসহ এই অধমও যারপরনেই প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছি।

আল্লাহর রহমতে আমরা শীঘ্রই মঞ্জিলে মকুছদে পৌঁছে যাবো।

জমি দানপত্র গ্রহণ থেকে শুরু করে অদ্যাবধি আমাদের পাশে রয়েছেন একাধিক ব্যক্তি। এরমধ্যে জমি দাতা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নান তপাদার, মোঃ আনছার আলী, দুই সহোদর হাসান ও হোসেন, এরশাদ মিয়া মেম্বার, নুর হোসেনসহ স্থানীয় সুধিজন হিসেবে শফিউল আলম মেম্বারসহ অনেকেই কলেজ প্রতিষ্ঠার সহযোগিতায় এগিয়ে এসেছেন।

ভূমি পরিমাপ-পরিচিহ্নিতকরণ কাজে আলীকদম ভূমি অফিসের কানুনগো মাগ্য মার্মা যারপরনেই ত্যাগ ও কষ্ট করেছেন। জমি দানপত্র রেজিষ্ট্রেশন থেকে শুরু করে সার্বিক কাজে সহযোগিতার অবারিত হাত প্রশস্থ করেছেন ইউএনও অফিসের রেজিস্ট্রেশন সহকারি মিটু দাশ।

অপরদিকে, ইতালির পাডোবা ইউনিভার্সিটির এমএসসি এনভাইরনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ অধ্যায়নরত একজন ছাত্র আলীকদম কলেজ প্রতিষ্ঠায় সর্বপ্রথম ২ লাখ টাকা অর্থ অনুদান দিয়ে গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের সাক্ষী হলেন।

যোগ্য পিতার গুণী এ ছাত্রের নাম প্রকৌশলী কুমার সুদীপ্ত জয়। একজন অধ্যায়নরত শিক্ষার্থী সুদূর বিদেশ-বিভূঁইয়ে থেকে শিক্ষা প্রসারের আলোকপ্রভা দেখালেও আলীকদমের গোবেচারা জনপ্রতিনিধি তার পূর্বের ধারাবাহিকতায় শিক্ষাবিরোধী কর্মকাণ্ডে নীরবে কাজ করে যাচ্ছেন।

এখন এ জনপদে শীতের হিমেল হাওয়া বইছে। শীতের এই ঠান্ডা পরিবেশে মীর জাফরের বশংবদেরা সাম্প্রতিক সময়ে একটি তাণ্ডব শুরু করেছে। তাণ্ডবটা কেন, কী উদ্দেশ্যে শুরু করেছে তার পূর্বাপর ইতিহাস জানলে আপনি ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নিবেন।

কিন্তু আশার বাণী হচ্ছে, ১৭৫৭ সালের যে প্রেক্ষাপট, ৫৮ সালের প্রেক্ষাপট, ৬০-৬২ সালের প্রেক্ষাপটে মীর জাফর এবং বংশধরেরা বাংলার জমিনে তাণ্ডব চালিয়েছিল, জনগণ যেভাবে ভীতশ্রদ্ধ-ভীতসন্ত্রস্ত হয়েছিলো এখন সেটা নেই। এখন বুক ফুলিয়ে মীর জাফরের মানুষ সমালোচনা করেন।

এমন একজন মীর জাফর আলীকদম কলেজ প্রতিষ্ঠার কাজকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য সর্বোতভাবে অপচেষ্টা চালাচ্ছেন। দু’মাস আগে থেকে তার এ মিশন শুরু হলেও চরমভাবে সে মিশন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। এখন শেষ সময়ে এসে কলেজ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অগ্রগামীদের নিয়ে কুৎসা রটাচ্ছেন। জমির দানপত্র নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করাচ্ছেন। সুন্দর একটি উদ্যোগকে নস্যাৎ করতে রটনা তৈরীতে অবৈধ টাকা ছিটাচ্ছেন।

কিন্তু আশার কথা হচ্ছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্থানীয় নেটিজনেরা আলীকদম কলেজ প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টাকে সর্বোতভাবে স্বাগত জানাচ্ছেন, পাশে থাকার জন্য মনেপ্রাণে এগিয়ে আসছেন।

আমরা এখনো সেই মীর জাফরের নাম প্রকাশ্যে আনলাম না। সময়ে সে নামটা প্রকাশিত হবে। সে সময় ক্ষুব্ধ জনতা তাকে সাধ্যমতো ঘৃণাবৃষ্টি বর্ষণ করে আদর-আপ্যায়ন করবেন।

ক্ষমতার মসনদে থাকা এই মীর জাফর দীর্ঘদিন আলীকদমের মাটিতে শূণ্যের উপরে যে বাহাদুরী করে চলেছে, তার সময় শেষ হয়ে আসছে। ইনশাআল্লাহ, অচিরেই আলীকদম কলেজ পূর্ণাঙ্গ অবয়বে প্রতিষ্ঠা হবে। ২০২৪ সালে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করার জোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। মীর জাফরের শয়তনী আলটিমেটলি ধুপে টিকবে না।

ফলে এই মীর জাফরি কর্মকাণ্ডের করুণ পরিণতি তিনি ভোগ করবেন। তার দাম্ভিকতা ধুলায় মুছড়ে পড়বে। আলীকদমের আকাশে সূর্যের প্রদীপ্ত আভায় কলেজ প্রতিষ্ঠার ঝলকানি দেখে তার হাঁটু কাঁপবে, কোমর কাঁপবে, ঈর্ষার আগুনের জ্বালায় তার তলপেট শিনশিন করবে এবং একসময় বুকের ধড়পড়ানি বেড়ে গিয়ে ধুলায় লুঠিয়ে পড়বে।

আলীকদম কলেজ প্রতিষ্ঠার প্রতিদিনের এগিয়ে যাওয়ার পথপরিক্রমায় মীর জাফরের উত্তরসূরীরা ক্লান্ত হয়ে পড়ছে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে এরা সময়ে-সময়ে একেকটা বিরূপ ঘটনা জন্ম দেওয়ার পাঁয়তারা করবে। তবে আমরা সতর্ক।

আলীকদম কলেজ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে আলীকদমের জমিনে একটি ইতিহাস-উপাখ্যান তৈরী হয়ে যাবে। সেই অংশের দায়ভার নিবেন আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম।