মোঃ শাহ আলম
পার্বত্য জেলা আলীকদম ও লামায় ভারি বর্ষণে গত তিনদিন(৫-৮আগস্ট) ধরে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
মাতামুহুরী নদীর বন্যার পানিতে আলীকদমে পানিতে ডুবে মারা গেছে একজন।
লামা-আলীকদম দুই উপজেলার প্রায় ২০ হাজার মানুষ পানি বন্ধি অবস্থায় রয়েছে।
বিদ্যুৎ ও সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ থাকায় এলকাজুড়ে খাদ্য সংকটের আশংকা দেখা দিয়েছে।
বন্যা ও দুর্যোগ মুহুর্তে মরার উপর খাড়ার ঘা হয়েছে সরকারি মোবাইল সার্ভিস টেলিটক এবং বেসরকারি মোবাইল নেটওয়ার্ক গ্রামীণ এর নেট না থাকা।
এদিকে ঠাঁই মিলছে না সরকারি ঘোষিত অস্থায়ী আশ্রয়ণ কেন্দ্রে। চরম দূর্ভোগে পড়েছে দুই উপজেলাবাসী।
খরস্রোতা পাহাড়ি নদী মাতামুহুরী নদীর পানি অতি বৃষ্টির কারণে ৪ দিন ধরে লামা ও আলীকদম উপজেলার বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এ ধরনের বন্যা সর্বশেষ ২০১৮ ও ২০১২ সালে হয়েছিল এই দুই উপজেলায়। তবে এবারের বন্যা আলীকদম উপজেলার চেয়ে লামায় বিভীষিকা হয়েছে বেশি।
এদিকে বন্যায় ফসল ও ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। নানা ধরনের সবজি ও ধানক্ষেত বন্যার পানিতে ডুবে অন্তত ১৫ কোটি টাকার মুল্যে ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ার ধারণা করছে স্থানীয় কৃষি সমবায় সমিতি ও কৃষকেরা।
এদিকে পানি বন্ধি ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার আশ্রয়ণ কেন্দ্রে অবস্থান করছে। লামা ও আলীকদম দুই উপজেলায় ৫০টি আশ্রয়ণ কেন্দ্রে অন্তত ৫ হাজার মানুষ আশ্রয় গ্রহণ করেছে।
ত্রাণ তৎপরতা
পানি বন্ধি পরিবারের মাঝের আলীকদম উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনো খাবার বিতরণ অব্যাত রয়েছে।
পাশাপাশি আলীকদম সেনা জোন, জনপ্রতিনিধি এবং ব্যাক্তি উদ্দোগে খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। এতে বিভিন্ন রাজনৈকিক সংগঠন ত্রাণ ও খবার বিতরণ করতে দেখা যায়।
আলীকদম উপজেলা প্রশাসন:
সর্বশেষ মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) সকাল ও দুপুরের দিকে আলীকদম উপজেলার ৪ নং কুরুকপাতা ও ৩নং নয়াপাড়া ইউনিয়নের বন্যা কবলিত বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন ও এাণ বিতরণ করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাবের মোঃ সোয়াইব।
আলীকদম ব্যাটালিয়ন (৫৭ বিজিবি)
আলীকদম ব্যাটালিয়ন (৫৭ বিজিবি) এর সার্বিক ব্যবস্থাপনায় আলীকদম সদর এলাকার রোয়াম্বু বুলু কারবারীপাড়া ও আব্বাস কারবারীপাড়ায় চলমান বৈরী আবহাওয়া ও ভারী বর্ষন পরিস্থিতিতে স্থানীয় গরীব-দুঃস্থ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী এবং বাঙ্গালীসহ ১০০ পরিবারের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে।
এরমধ্যে রয়েছে জন প্রতি ০৫ কেজি চাউল, ০১ কেজি ডাল, ০১ কেজি চিনি, ০১ কেজি তৈল, ১.৫ কেজি আলু এবং ০১ কেজি চিড়া।
ত্রাণ বিতরণকালে উপস্থিত ছিলেন আলীকদম ব্যাটালিয়ন (৫৭ বিজিবি) এর অধিনায়ক লেঃ কর্নেল আকিব জাভেদ, পিএসসি।
এ সময় মেডিক্যাল অফিসার ক্যাপ্টেন মশিউর রহমান, এএমসি এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে ২৫ জন অসহায়, দুঃস্থ ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মাঝে চিকিৎসা সহায়তা প্রদান ও ঔষধ বিতরণ করা হয়।
আলীকদম সেনা জোন
আলীকদম সেনা জোনের উদ্যোগে বন্যার্ত দুঃস্থ জনগণের মাঝে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। মঙ্গলবার (৮আগস্ট) কানা মাঝি আর্মি ক্যাম্প এবং জ্বালানি পাড়া আর্মি ক্যাম্প এলাকার বন্যার্ত দুঃস্থ জনগণের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হয়।
সড়ক যোগাযোগ ব্যাহত
পাহাড়ি ঢলে আলীকদম-লামা-ফাঁসিয়াখালী সড়কের কয়েকটি স্থানে পানিতে রাস্তা ডুবে যাওয়ায় আপাতত আলীকদমের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
পন্যবাহী গাড়ি উপজেলায় প্রবেশ করতে না পারায় নিত্য প্রয়োজনিয় দ্রব্য পিঁয়াজ, তেল, ডিম, ডাল ও শুকনো খাবার সংকট দেখা দিয়েছে।
অন্যদিকে অধিকাশ পুকুর বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে করে বাজারে মাছের সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।
সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, আলীকদম সদর ইউনিয়ন পরিষদের বেশ কিছু এলাকা, ৩নং নয়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের এলাকা, ২নং চৈক্ষ্যং ইউনিয়ন পরিষদের এলাকায় কয়েক সহস্রাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
সংকট বেশি লামা উপজেলা সদরে
লামা উপজেলার চিত্র বয়াবহ। লামায় পৌর এলাকাসহ কয়েকটি ইউনিয়নে বাড়ির এক তলা সমান পানি বেড়ে হাজার হাজার পরিবার পানি বন্ধি রয়েছে।
বন্যা দুর্গত এলাকায় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধি
আলীকদমে বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাবের মোঃ শোয়াইব, বান্দরবান জেলা পরিষদের সদস্য দুংড়ি মং মার্মা, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সৌভ্রাত দাশ, আলীকদম সদর ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নাছির উদ্দীন, ৩নং নয়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কফিল উদ্দিন।
উপজেলা প্রশাসনের ঘোষণা
আলীকদম উপজেলা নির্বাহী অফিসার এর ফেসবুকে আইডিতে ঘোষণায় ইউএনও বলেন,
‘মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বিরতিহীন বৃষ্টির কারণে উপজেলার বেশিরভাগ এলাকা প্লাবিত হওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ সবাইকে আশ্রয়কেন্দ্র অবস্থান নেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হলো।’
দুর্যোগ মুহুর্তে বিদ্যুৎ ও নেটওয়ার্ক সংযোগ না থাকায় ইউএনও, আলীকদম এর অফিসিয়াল নম্বরটি বন্ধ রয়েছে। জরুরী প্রয়োজনে এই নম্বরে ০১৬৮২৫০৩২৯৫ যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।
বিদ্যুৎ সংযোগ ও নেটওয়ার্ক স্বাভাবিক হলে আগের অফিসিয়াল নম্বর ০১৭০৮৩৯৯০০৮ পাওয়া যাবে।’
আলীকদম উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাবের মোঃ সোয়াইব বলেন, বন্যায় সৃষ্ট জনদূর্ভোগে উপজেলা প্রশাসন সহযোগিতার জন্য হটলাইন খোলা হয়েছে। খাদ্য বা সাহায্যের প্রয়োজনে আলীকদম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ফায়ার সার্ভিস, যুব রেড ক্রিসেন্ট ও আলীকদম থানা প্রস্তুত রয়েছে।
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ও পাহাড়ের ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসবাসকারীদের আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়েছে। উপজেলায় ৪টি ইউনিয়নের ১৫ টি প্রাথমিক স্কুল, মাধ্যমিক স্কুল ও মাদ্রাসাকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসাবে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে আসা লোকজনের খাবারের সরবরাহ করা হচ্ছে।
আপনার মতামত লিখুন :