‘এর থেকে আনন্দের সংবাদ বাবা-মার জীবনে আর কী হতে পারে‘ : ডা. বাবরের মা-বাবা


Momtaj Uddin Ahamad প্রকাশের সময় : মে ১৯, ২০২৪, ২:০৬ অপরাহ্ন /
‘এর থেকে আনন্দের সংবাদ বাবা-মার জীবনে আর কী হতে পারে‘ : ডা. বাবরের মা-বাবা

চিকিৎসক হয়েও পর্বত জয়ের ইচ্ছা তার পিছু ছাড়েনি: বাবরের মা

রোববার (১৯ মে) বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৮টায় এভারেস্টের চূড়ায় ওঠেন তিনি।

বেসক্যাম্প ম্যানেজার ও আউটফিট মালিকের বরাত দিয়ে অভিযানের সমন্বয়ক ফরহান জামান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এ খবর জানাজানি হওয়ার পর বাবর আলীর হাটহাজারীর বুড়িশ্চর এলাকার বাড়িতে বইছে আনন্দের বন্যা। গণমাধ্যমে খবরটি প্রকাশিত হওয়ার পর আশপাশের মানুষজন আসছেন বাবর আলীর পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে, অভিনন্দন জানাতে।

রোববার সকালে ডা. বাবর আলীর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ঘরে আছেন বাবর আলীর বাবা লিয়াকত আলী, মা লুৎফুন নাহার। ছেলের এভারেস্টের ছবি হাতে নিয়ে বসে আছেন তারা। একে, একে গণমাধ্যম কর্মীরা আসছেন, কথা বলছেন তাদের সঙ্গে। মাঝে, মাঝে উঠে গিয়ে বাবর আলীর রুমে যান তার মা। পুরো রুমটি বাবর আলীর বিভিন্ন ছবি দিয়ে পরিপূর্ণ। সযত্নে ছেলের ছবিগুলো মুছে দিচ্ছিলেন মা লুৎফুন নাহার।

আরও পড়ুন: যেসব পর্বতের চূড়ায় পা পড়েছে বাবর আলীর

ছেলের এভারেস্ট বিজয়ে ছল ছল চোখে বাবর আলীর বাবা-মা সময় সংবাদকে বলেন, ‘অনেক দুশ্চিন্তা ছিল। কঠিন এই যাত্রা ছিল। সকালে যখন ছেলের এভারেস্ট বিজয়ের কথা শুনলাম- এর থেকে আনন্দের সংবাদ বাবা-মার জীবনে আর কী হতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বকা দেই বলে আমাদের কিছু বলত না। ভাই-বোনদের সঙ্গে এসব বিষয় নিয়ে কথা বলত। এখনও আমার দুশ্চিন্তা রয়েছে। নেমে আসার পথটুকু অনেক কঠিন। যতক্ষণ পর্যন্ত আমার ছেলে আমার বুকে ফিরে না আসবে ততক্ষণ আমার দুশ্চিন্তা কমবে না।’

ডা. বাবর আলীর মা লুৎফুন নাহার বলেন, ‘আমার চার ছেলে-মেয়ের মধ্যে বাবর আলী দ্বিতীয়। ছোটবেলা থেকেই ছিল ডানপিঠে। পাহাড়-পর্বতে ছিল ঘোরার সখ। আমরা চেয়েছিলাম সে ডাক্তার হোক। আমাদের ইচ্ছেতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ডাক্তারি পাশ করেছিল। কিন্তু পর্বত বিজয়ের ইচ্ছা তার পিছু ছাড়েনি। ২০১০ সালের পর থেকেই এভারেস্ট বিজয়ের স্বপ্ন দেখতে থাকে।’

পাশে বসে থাকা বাবর আলীর বাবা লিয়াকত আলী বলেন, ‘আমার ছেলে ডাক্তার। কিন্তু সে ডাক্তার হতে চায়নি। হতে চেয়েছিল সাংবাদিক। যাতে সে ঘোরাফেরা করতে পারে। আমরা তাকে ডাক্তারি পড়ায় চাপ দেয়ায় এখনও বিভিন্ন সময় ক্ষোভ প্রকাশ করে। আমার ছেলে পড়ালেখায় ছিল খুব ভাল। বেশিক্ষণ পড়ত না। যা পড়ত মনে রাখত।’

এ সময় তিনি আরও বলেন, ‘ছেলের এভারেস্ট বিজয়ের খবর শোনার পর চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি। এক জীবনে এর থেকে বেশি আনন্দ আর কী হতে পারে!’

পৃথিবীর সর্বোচ্চ মাউন্ট এভারেস্টে প্রথম অভিযান পরিচালিত হয় আজ থেকে শত বছর আগে। ১৯২১ সালে মাউন্ট এভারেস্টের সাফল্য গাঁথার গল্প শুরু। তবে পৃথিবীর এই শীর্ষ বিন্দুতে বাংলাদেশিদের অভিযান হয়েছে আরও পরে। ২০১০ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি পর্বাতারোহী মাউন্ট এভারেস্ট সামিট করেন। এরপর নেমে আসে খরা। ১১ বছরের সেই খরা কাটিয়ে নেপালের স্থানীয় সময় সাড়ে আটটায় মাউন্ট এভারেস্টের চূড়ায় বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা উড়িয়েছেন বাবর আলী।

কাগজে-কলমে আজ থেকে দুই মাস আগে অভিযান শুরু হলেও কঠিন অধ্যাবসায় শুরু হয়েছিল দশ বছর আগে।