আলীকদম উপজেলা সদরের অনতিদূরে আলীর পাহাড় ও আলীর সুড়ঙ্গের অবস্থান। অনেকের মতে এই পাহাড় ও সুড়ঙ্গের নামটি ঐতিহাসিক। আলীর পাহাড় ও সুড়ঙ্গকে নিয়ে রয়েছে নানান কিংবদন্তি-রূপকথা-উপকথা এবং জনশ্রুতি (Mythology) । আলীর পাহাড়ে রয়েছে খোদাইকৃত ৩/৪ টি সুড়ঙ্গ। আমরা আলীর সুড়ঙ্গের নামকরণ প্রসঙ্গ ও পুরাকালের একটি ভৌতিক কল্পকাহিনীর অবতারণা করবো।
‘আলীর পাহাড়’ নামকরণের ইতিহাসটি রহস্যাবৃত। এ নামটি নানান কারণে কৌতুহলোদ্দীপক। দুর্গম অরণ্যে কীভাবে একটি মুসলিম ঐতিহ্যমন্ডিত নামে পাহাড়ের নামকরণ হলো? সুদীর্ঘকাল ধরে নামটিই বা অবিকৃত থাকলো কি করে? এ প্রশ্ন তোলা যায়।
তবে সে উত্তর পাওয়া যায় সপ্তদশ শতকে (১৬৬১ খ্রিস্টাব্দ) আলীকদমে বাংলার সুবেদার শাহ সুজার সেনাপতি ফতে খাঁর নেতৃত্বে মোগল বাহিনী কীভাবে রামু থেকে দুর্গম অরণ্যপথ পাড়ি দিয়ে আলীকদম ঢুকে পড়েছিল! তার একটি ধারাবাহিক তাৎপর্য ও ঐতিহাসিক বিবরণ রয়েছে। ‘আলীকদম’ নামকরণ থেকেই ‘আলীর পাহাড়’ ও ‘আলীর সুড়ঙ্গ’ নামকরণ সহজেই অনুমেয়।
আমরা ইতিহাসের জটিল পাঠ বাদ দিয়ে আলীর সুড়ঙ্গ নিয়ে এক রূপসী নারী ও কাঠুরিয়ার মধ্যে ঘটে যাওয়া একটি পৌরানিক কাহিনীর অবতারণা করবো।
প্রথমেই বলে রাখা ভালো আমি ২০০৫ সালে প্রথম এ গল্পটির সন্ধান পেয়েছিলাম। গল্পটি শ্রুত হয়ে লেখার সময় বড়ো ইচ্ছা নিয়ে সে ঘটনাটির কল্পচিত্র আকঁতে চাইলাম। কিন্তু স্বপনলোকে কিংবা কল্পনার রাজ্যে শুধু আলো-আঁধারীর কিছু চিত্র দেখতে পেলাম
মনে হলো ভালো করে কান পাতলেই সেদিনকার সমস্ত কথাই স্পষ্ট শোনতে পাবো! কিন্তু গোধুলীতে আলীর পাহাড়ের সে সময়কার অরণ্যের ঝিল্লিরব বেশী থাকায় তাদের কথোপকোথন বেশী শুনতে পেলাম না!
আজ থেকে প্রায় সাড়ে তিনশ’ বৎসর আগের কথা। সেদিনকার বিকেল বেলার ঘটনাটি ঠিক আমার সম্মুখে দুলছিল। আমি ভয়মিশ্রিত কল্পরাজ্যে ডুব দিয়ে তৈনখাল পাড়ের সেদিনকার গোধুলীতে পুরোপুরি দৃষ্টিপাত করি। দেখতে পেলাম কাঠুরিয়া আর ঝটাধারী লোকটির মাঝে সভা বসেছে। সন্ধ্যার গাঢ় অন্ধকার নেমে আসায় স্পষ্ট কিছুই দেখা যাচ্ছিল না!
সন্ধ্যাছায়াচ্ছন্ন খাল পাড়ের সমস্ত বনভূমি ওই মুহূর্তে একসঙ্গে মর্মরধ্বনি করে জেগেছিল ঝটাধারী ও কাঠুরিয়াদের সেদিনকার কথোপকোথন শোনার জন্য।
তৈনখাল আর আলীর পাহাড়ের সমস্ত জন্তু-জানোয়ারও যেন কান পাতলো সে গল্পে!
এটা স্বপ্ন হোক কিংবা সত্য হোক, সাড়ে তিনশ’ বছরের অতীত সেই তৈনখাল পাড়ের কাঠুরিয়াদের কুটির হতে প্রতিফলিত হয়ে আমার সম্মুখে যে অদৃশ্য মরীচিকা অবতীর্ণ হয়েছিল তা চকিতের মধ্যে আবার অন্তর্হিত হলো!
এই গল্পে একজন রূপসী নারী আছে। আমার কল্পলোকের ওপর দিয়ে দেহহীন দ্রুতপদে এবং শব্দহীন উচ্চকলহাস্যে গল্পের সেই নারীটির ছুটে যাওয়া অনুভব করলাম! তৈনখালের পানি ডিঙ্গিয়ে তার সিক্ত অঞ্চল হতে পানি নিষ্কর্ষণ করার চিত্র পর্যন্ত ছায়ার মতো দেখতে পেলাম!
হঠাৎ আমার আশঙ্কা হল যে, এই বুঝি নির্জন পেয়ে রূপসীর ছায়ামূর্তি আমার কাধে ভর করলো! ভয়ে আমার ধ্যান কেটে গেলো। সেদিনকার ঘটনাটির কল্পচিত্র নিম্নরূপ-
সপ্তদশ শতকের সত্তর দশকের ঘটনা। আলীকদমের লোকালয় থেকে মাতামুহুরী নদী তীরবর্তী আলীর পাহাড়ে একদল মেহনতি কাঠুরিয়া জীবিকার সন্ধানে কাঠ ও বাঁশ আহরণে যান। প্রতিদিনের মতো কাজ শেষে বিকেল বেলা পরিশ্রান্ত কাঠুরিয়ার দল তৈনখালের ঢালুর পাড়ে নির্মিত একচালা ঝুপড়ী ঘরে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। সে সময় একজন ঝটাধারী লোক হঠাৎ তাদের সামনে আভির্ভূত হন! মাথার চুল, গোঁফ, দাড়ি ও নখ অনেক লম্বা ছিল লোকটির।
সকলেই বিস্ময়ে হতবাক! কেউ ভাবতেই পারেননি এমনটি হওয়া সম্ভব। কাঠুরিয়াদের বুকের মাঝে কম্পন হতে লাগলো; সে উত্তেজনা কি ভয়ের কি কৌতুহলের, ঠিক বলতো পারছি না।
কাঠুরিয়ারা ভাবতে লাগলো গহীন বন থেকে এমন এলোচুলো মানুষ এলো কোত্থেকে!
কাঠুরিয়ারা ভয়ে তটস্থ এবং কৌতুহলে উদ্গ্রীব! কিন্তু আগন্তুক ভয়লেশহীন। করুণ চাহনী তার। করজোড়ে সাহায্য পাওয়ার আর্তি। কয়েকজন কাঠুরিয়া সাহস সঞ্চার করে ঝটাধারী লোকটির কাছে জানতে চান- কে তুমি?
ঝটাধারী অপরাধীর ন্যায় করুণভাবে হাতজোড় করে বলে উঠে, ‘আমাকে ভয় করো না! আমি কোন জ্বিন-ভূত, পাগল বা দস্যু নই। আমি এক বিপন্ন, হতভাগ্য লোক। আমাকে আশ্রয় দাও।’
লোকটির করুণ মিনতিতে কাঠুরিয়াগণ তাকে আশ্রয় দিলো।
কাঠুরিয়ারা দেখতে পেলেন, ঝটাধারীর লম্বা চুল-দাড়ি-গোঁফের অন্তরালে একটি সুন্দর মানবমূর্তি লুকায়িত। তার চোখেমুখে শুভ্র শরৎকালের মতো যৌবনের মধ্যগগণের একটি গভীর প্রশান্ত প্রগাঢ় সুন্দর রূপ ঠিকরে পড়ছে। হয়তো কোন অঘটনে লোকটার উদ্দাম যৌবনের বসন্তচঞ্চলতায় ধুলিমলিন ঘটনা ঘটেছে! সংসারের মাঝখানে লোকটি বাঁধাপ্রাপ্ত হয়েছে।
কাঠুরিয়ারা বুঝতে পারলো তাদের আয়ত্তের অতীত কুহকিনী কোন মায়ালোক হতে এই ঝটাধারী লোকটা ছাড়া পেয়েছে। তাই তাকে উদ্ভ্রান্ত মনে হচ্ছে!
এবার কাঠুরিয়ারা ঝটাধারীর মুখের দিকে করুণার মুগ্ধদৃষ্টিতে তাকালেন। ততক্ষণে কাঠুরিয়াদের ভয়মিশ্রিত বিস্ময় কৌতুহল কেটে গেছে।
কাঠুরিয়া দলের কাইতাং (সর্দার) ঝটাধারী লোকটার কাছে ‘ঘটনা কি’ বলে তার পরিচয় জানতে চাইলেন।
তখন লোকটি কাঠুরিয়াদের কাছে যে কাহিনীটি বর্ণনা করেছিলো তা নিন্মরূপ-
লোকটি বললোঃ বেশ কিছুদিন আগের কথা। সন তারিখ আমার মনে নেই। তোমাদের মত একদল কাঠুরিয়ার সাথে আমি এই আলীর পাহাড়ে বাঁশ-কাঠ কাঠতে এসেছিলাম।
একদিন সবাই গভীর অরণ্যে বাঁশ কাটছিলাম। এ সময় আমি সঙ্গীদের থেকে একটু বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ি। আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই কোত্থেকে আদিম এক রূপসী কন্যা এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। তার পরণে ছিল গাছের পত্রপল্লব।
রূপসীর মায়াবন্ধনে আমি এমনই মোহগ্রস্থ হলাম যে, মনে হলো, এই জগতে রূপসীর কোমল ছোঁয়াটিই একমাত্র সত্য, আর সমস্তই মিথ্যা মরীচিকা।
আমার সঙ্গী-সাথীরা অনেক খোঁজাখুজির পরও আমাকে না পেয়ে ব্যর্থ মনোরথে বাসায় ফিরে গেলো। তারা মনে করলো, আমি কোন হিংস্র জীব-জন্তুর শিকারে পরিণত হয়েছি।
সঙ্গীদের খোঁজাখোজির বিষটি আমি অদূরে দাঁড়িয়ে লক্ষ্য করলাম। কিন্তু আওয়াজ করার মতো শক্তি তখন আমার ছিলনা। তখন আমি রূপসীর বাহুডোরে আবদ্ধ। পরে ঐ রূপসী কন্যা আমাকে নিয়ে আলীর সুড়ঙ্গে ঢুকে পড়লো।
লোকটি আরো জানাল, আলীর পাহাড়ে থাকা সুড়ঙ্গগুলোর মধ্যে আমাকে নিয়ে ঐ রূপসী সুড়ঙ্গের তৃতীয়টিতে প্রবেশ করলো।
ক্রমেই সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসলো। সুড়ঙ্গ মুখে সূর্যের শেষ আলোকরশ্মিটিও নিভে গেল। আমার সম্মুখবর্তী সুড়ঙ্গ মুখ দিয়ে অন্ধকারাচ্ছন্ন বনবেষ্টিত আলীর পাহাড়ের উপরে একটি অত্যুজ্জ্বল তারা দূর আকাশ হতে অতিতুচ্ছ আলো ছড়াচ্ছিল। তখনও সেই রূপসী-মায়াবীনির বাহুডোরে আমি মোহাচ্ছন্ন। আমি বিস্ময় ও কৌতুক অনুভব করতে করতে সেইদিন রাতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম তা বলতে পারছি না। ঘুমেও বা কতক্ষণ ছিলাম তা মনে নেই।
সম্ভবত ভোর রাত। একসময় শিহরিত হলাম। জেগে উঠলাম। গুহাভ্যন্তরে কোনো সাড়া-শব্দ নেই। গুহামুখ থেকে অন্ধকার আলীর পাহাড়ের উপর হতে অনিমেষ নক্ষত্রটির স্তমিত হতে দেখলাম। খানিকপর আকাশে ক্ষীণচন্দ্রালোক ম্লানভাবে গুহামুখে প্রবেশ করেছে। আমার ঘোর আরো কেটে গেলো।
আমার স্পষ্ট মনে হল, অপরিচিতা একজন নারী আমার পাশে! আমিই বা এখানে কেন তা ভাবতে লাগলাম। আমাকে তখন রূপসী নারীটি ঈশারায় কথা বলতে বারণ করলো।
আমার মাঝে ভয়ের সঞ্চার হলো। চমকে উঠলাম! ভাবলাম আমার সাথীরা কোথায়। আবারও আমার চারপাশে প্রকান্ড এক শুন্যতা অনুভব করলাম। খানিক পরে পাশের নারীটির মধ্যে নিদ্রিত ধ্বনি শোনলাম। গুহা থেকে ভোরের আলো-আঁধারিতে বের হতে চাইলাম। তথাপি ভয় হতে লাগলো, যদি নারীটি জেগে উঠে!
সংযত নিশ্বাসে সেই নারীর বক্ষপাশ থেকে চিহ্ন হতে চাইলাম। কিভাবে আবার রূপীনির মায়াপাশে শোয়ে পড়লাম আজ তাহা স্পষ্ট আমার মনে নেই।
ভোর হলো। তখন আমি পুরোপুরি চেতনা ফিরে পেয়েছি। রূপসী নারীটির ভাষা আমি বুঝলাম না।
ততক্ষণে আমার মনে হলো মহিলাটির উদেশ্য ছিল আমাকে পাহাড় থেকে বাগিয়ে এনেছে তার সঙ্গী করবার জন্যে। বাস্তবেও ঘটেছিল তাই।
মাঝে মধ্যে ঐ রূপসী শ্বেতকায়ার বিশাল দেহী লম্বা মহিলায় রূপ নিত। তার অবয়ব হতো তখন অদ্ভুত আকৃতির। সে সময় তার পরণে থাকতো পশুর চামড়া। পাখির পলক ছাড়া কোন অলংকার ছিলনা। আগুনের ব্যবহার জানতো না। পশু পাখির গোশত ও ফলমুল খেয়ে জীবিকা নির্বাহ করতো। ক্ষুধার জ্বালায় আমিও আস্তে আস্তে সে সব খেতে বাধ্য হলাম।
আমার মাঝে গুহার চারপাশকে ক্রমশঃ ভয় লাগা শুরু করলো। কারণ শূন্যস্বপ্নময়ী মায়াবিনী এই সময়টায় আমার নিজের অস্তিত্বকে অত্যন্ত তুচ্ছ মিথ্যা বলে মনে হতে লাগলো। সেই মায়াবীনির বাহুডোরও আমার কাছে ক্রমেই অসহ্য হতে লাগলো।
এভাবে দিন যায়, রাত আসে। মাস বছরের হিসাব আমার জানা নেই। কখন দিন রাত হয় গুহার মধ্য থেকে আমি কিছুই জানতে পারতাম না। তিমির সুড়ঙ্গের বন্ধিত্ব জীবন আমার কাছে অসহনীয় হয়ে উঠলো।
মাঝে মাঝে মহিলাটি আমকে সুড়ঙ্গে রেখে গহীন অরণ্যে একাকী ঘুরে বেড়াতো। শিকারে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সে গুহা মুখে একটি বড় পাথর চাপা দিয়ে রাখতো। যাতে আমি সুড়ঙ্গ থেকে কোনমতে বের হতে না পারি।
ক্রমান্বয়ে মহিলাটি আমার সাথে ভাব জমাতে শুরু করে। আমরা কথা বলতাম ইশারা-ইঙ্গিতে। সৌহার্দ্য সম্প্রীতি ও ভাবের আদান প্রদানের মাধমে আমরা একে অপরের কাছাকাছি আসতে থাকি।
এই রূপসী দিনদিন আরো সুন্দর অবয়বে রূপ নিলো। আমি যেন আবার স্বপ্নঘোরে আচ্ছন্ন হলাম। রূপসীর আগমণ হলে গুহার বায়ুর হিল্লোলে মধ্যে গোলাপ-হেনার গন্ধ ছড়িয়ে পড়তো। অকস্মাৎ এই রূপসীর উপস্থিতি আমার মাঝে বিদ্যুৎশিখার মতো মনে হতো। আমি চকিত হতাম তার রূপ-লাবণ্যে।
কয়েকদিন পর তার দুটি শুভ্র রক্তিম কোমল পায়ে জরির চটি পরা দেখলাম। বুকে জরির ফুলকাটা কাঁচুলি আর মাথার সোনার টুপি এবং তা হতে সোনার ঝালর ঝুলে পড়ে শুভ্র ললাট এবং কপোল বেষ্টন করে আছে।
সে আমাকে পাগল করে দিলো। আমি তার অভিসারে এবং প্রতিরাতে ঘুমের রসাতলরাজ্যে গুহার জটিল-কঠিন জীবনসংসারে বন্দী হতে লাগলাম। এ যেন এক মায়াপুরি।
লোকটি আরো বললো- মহিলাটি তার মানস কামনা চরিতার্থ করতে আমাকে আরো কাছে টানতে থাকে। তার যৌবনপুষ্পিত দেহলতা দিয়ে আমাকে আটকাতে লাগলো। আমি বেদনা বাসনা ও বিভ্রমের মধ্যেই রূপসীর জালে আটকে যাচ্ছিলাম। আমি সবকিছু টের পেলাম। কিন্তু কোন উপয়ান্তর আমার সম্মুখে ছিল না।
আমি তার ভয়মিশ্রিত ভালোবাসায় সবকিছু করতে বাধ্য হলাম। একপর্যায়ে আমাদের এ অভিসারের ফলে রূপসীর গর্ভে সন্তান আসে। যথারীতি মহিলাটি একটি ফুটফুটে সন্তান প্রসব করে। রূপসী এই ডাইনি তখন মনে করলো আমি তার প্রতি পুরোপুরি অনুরক্ত হয়ে গেছি। কিন্তু আদৌ তার প্রতি আমার আসক্তি ছিলনা।
একদিন ডাইনি শিকারে যাওয়ার সময় গুহামুখে পাথর চাপা দিয়ে যায়নি। শিশুটি আমার কাছেই রেখে যায়। এতে করে বাহির থেকে সূর্যের আলোর ঝলকানি ছিদ্র পথে গুহার ভিতর প্রবেশ করে। তখন আমি এই সুযোগটি গ্রহণ করি এবং গুহা থেকে বেরিয়ে আসি।
গুহার বাইরে এসে এই মায়াময় পৃথিবীর আকাশ, হৃদয় দোলানো বাতাস আমার অস্তিত্ব নতুন ভাবে উপলব্ধি করতে সাহায্য করে। প্রকৃতির কোলাহল মনকে দোলা দিতে থাকে। সুন্দর পৃথিবীর অতীত স্মৃতি আমার মানসপটে ভেসে উঠে। ডাইনীর কথা মনে পড়তেই আমি সেখান থেকে এইতো পালিয়ে তোমাদের সামনে এলাম!
তাদের সেই পারস্পরিক আলাপচারিতার শেষ হতে না হতেই হঠাৎ ডাইনী মহিলা তার শিশুকে বুকে জড়িয়ে সেখানে উপস্থিত হয়। সকলে হতভম্ব ও দিকভ্রান্ত হলো।
তখন ডাইনী রক্তচক্ষে পালিয়ে আসা লোকটির দিকে তীক্ষ্ণদৃষ্টি নিক্ষেপ করে তর্জন গর্জন করতে থাকে। সেখানে দাড়িয়ে ডাইনী অনেক্ষণ অরণ্যরোদন করলো। তার সেই কান্নায় বিরহের সুর ফুটে উঠে।
একপর্যায়ে তার আচরণে হিংস্রতা প্রকাশ পায়। তখন দুর্বোধ্য ভাষায় কুলের শিশুকে কি যেনো বলতো চাইলো। অত:পর বাচ্চাটির দু’ পা ধরে টান দিয়ে আকস্মিক দ্বিখন্ডিত করে ফেললো। এর এক খন্ড তার প্রণয়ী লোকটির প্রতি নিক্ষেপ করলো অপর খন্ড ডাইনী মুখে দিয়ে চিবুতে চিবুতে গহীন অরণ্যে অদৃশ্য হয়ে গেলো।
সে হতে সভ্য জগতের কোন লোকচক্ষুর আড়ালে ডাইনিটি দৃশ্যমান হয়নি।
আপনার মতামত লিখুন :